সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষা বাঁধের ঝুঁকি কমাতে নদীতে পণ্যবাহী নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা

ধর্মপাশার চন্দ্র সোনার থাল হাওরের ডোবাইল ফসলরক্ষা বাঁধটি মঙ্গলবার বিকেলে ভেঙে গেছে
ছবি: প্রথম আলো

ফসল রক্ষা বাঁধের ঝুঁকি কমাতে পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভরা সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সব নদীতে পণ্যবাহী ভারী নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

বিষয়টি তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদি উর রহিম জাদিদ নিশ্চিত করেন।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ দুই উপজেলার নদ-নদীর তীরে বেশ কিছু ফসল রক্ষা বাঁধ রয়েছে। এসব নদী এখন ঢলের পানিতে ভরে গেছে। বাঁধগুলো আছে ঝুঁকিতে। এ অবস্থায় ভারী নৌযান চলাচল করলে পানিতে ঢেউ ওঠে। সেই ঢেউ আছড়ে পড়ে বাঁধে। এতে যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। তাই নৌযান চলাচলে এই সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত থাকায় এখন জেলার সব হাওরের ফসলই ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

ছয় দিন ধরে ভারতের মেঘালয় থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে ঝুঁকিতে পড়েছে সুনামগঞ্জের হাওরের বোরো ফসল। গত শনিবার তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের একটি বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যায়। পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত থাকায় এখন জেলার সব হাওরের ফসলই ঝুঁকির মুখে পড়েছে। গতকাল সোমবার জেলার সদর উপজেলার ছোট কানলার হাওর ও শাল্লা উপজেলার মনুয়ারখলা হাওর, আজ মঙ্গলবার শাল্লা উপজেলার পুটিয়ারবন ও খইয়ারবন হাওর, ধর্মপাশা উপজেলার চন্দ্রসোনার থাল হাওরে বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে গেছে।

হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন কৃষকেরা। মঙ্গলবার দুপুরে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরে
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার ২২০ মেট্রিক টন।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৭২৭টি প্রকল্পে ৫২০ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজ হয়েছে। এ খাতে বরাদ্দ আছে ১২১ কোটি টাকা।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমরা হাওরে ফসল রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করছি। কিন্তু যেভাবে উজানের ঢল নামছে, তা অস্বাভাবিক। প্রশাসন, পাউবো কর্মকর্তা, কৃষক, জনপ্রতিনিধি সবাই মাঠে আছেন। তবে সবকিছুর পর প্রকৃতির ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে।’