সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত, তিন উপজেলায় পানি বাড়ছে

সুনামগঞ্জের বন্যায় প্লাবিত বাড়িঘর। ছবিটি আজ সোমবার সকালে সদর উপজেলার কালীপুর থেকে তোলা
ছবি: খলিল রহমান

সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমলেও সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অনেকটা অপরিবর্তিত আছে। তবে নতুন করে জেলার নিচু এলাকা হিসেবে পরিচিত জগন্নাথপুরসহ তিনটি উপজেলায় পানি বাড়ছে। এসব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আজ সোমবার সকাল নয়টায় সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৪৮ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার নিচে। গত দুই দিনে সুরমা নদীর পানি কমেছে ৩২ সেন্টিমিটার।

বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় ও প্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলায় জেলার প্রায় ৩০০ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ আছে। অভিভাবকেরাই শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। জেলার ছাতক উপজেলার সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাশে থাকা কৈতক ২০ শয্যার হাসপাতাল ভবন ও সামনের রাস্তা থেকে বন্যার পানি নেমেছে। সোমবার সকালে দেখা গেছে, সেখানে স্বাভাবিক সেবা কার্যক্রম চলছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে গত দুই দিন ভারী বৃষ্টি হয়নি। উজানের পাহাড়ি ঢল নেমেছে কম। এতে সুরমা নদীর পানি কমছে। তবে জেলায় উজানের পানি নামায় নিচু এলাকা জগন্নাথপুর, দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় পানি বাড়ছে।

এই তিন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় আশ্রয়কেন্দ্র, মেডিকেল টিম, ত্রাণসামগ্রী প্রস্তুত রেখেছেন।
দিরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুর রহমান জানান, দিরাইয়ে পানির চাপ বাড়ছে। বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁরা বৈঠক করেছেন।

উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সুনামগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায় ১৪ মে থেকে বন্যা দেখা দেয়। এর মধ্যে ছাতক ও দোয়ারাবাজারে বেশি আক্রান্ত হয়। ছাতক উপজেলার উত্তরের ইউনিয়নগুলোতে পানি কিছুটা কমেছে। তবে বেড়েছে দক্ষিণের জাউয়াবাজার, গোবিন্দগঞ্জ, সৈয়দেরগাঁও, সিংচাপইড় ইউনিয়নে। আজ সোমবার সকালে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক ধরে ছাতকে যাওয়ার পথে এসব ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত অবস্থায় দেখা গেছে। বন্যার পানিতে সড়ক প্লাবিত হওয়ায় সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়েছিল ছাতক ও তাহিরপুর উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের। তবে সেটি এখন স্বাভাবিক হয়েছে।

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবাংশু কুমার সিংহ জানান, দোয়ারাবাজারে পানি কমেছে। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে বন্যার পানি নেমে যাবে।

এদিকে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় এখনো পানি আছে। শহরের কালীপুর, হাসনবসত, ওয়েজখালী, পাঠানবাড়ি এলাকায় মানুষের বাড়িঘরে পানি বেশি। এ ছাড়া বড়পাড়া, মল্লিকপুর, শান্তিবাগ, পশ্চিম নতুনপাড়া, পশ্চিম হাজীপাড়া, হাসননগর, সুলতানপুর এলাকায় এখনো বন্যার পানি আছে। হাসননগর ও সুলতানপুর এলাকার ৬৬টি পরিবার সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে আশ্রয় নিয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বন্যাকবলিত পরিবারগুলোর সহায়তায় ১৭৫ মেট্রিক টন চাল, ১২ লাখ টাকা ও ৪ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। জেলায় এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ২০টি। এতে প্রায় ৩০০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়ারাবাজার—এই দুটি উপজেলা আক্রান্ত ছিল বেশি। এসব উপজেলায় অনেক পানি কমেছে। নতুন করে দু-একটি উপজেলায় পানি বাড়লেও সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।