সুনামগঞ্জে বন্যায় ৪৫ হাজার ঘর বিধ্বস্ত

সুনামগঞ্জের বন্যায় বিধ্বস্ত বসতঘর। সম্প্রতি জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মনিপুরী হাটি গ্রামে
ছবি: খলিল রহমান

সুনামগঞ্জে এবারের ভয়াবহ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মানুষের ঘরবাড়ির। এর আগে কোনো বন্যায় এত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়নি। এতে শ্রমজীবী, দরিদ্র মানুষেরা চরম বিপাকে পড়েছেন। বন্যার পানি কমলেও বাড়িঘর বিধ্বস্ত হওয়ায় এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষ নিজের ভিটায় ফিরতে পারছেন না।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১১টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভায় ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘরের সংখ্যা ৪৫ হাজার ২৮৮টি। এর মধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৪ হাজার ৭৪৭টি। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৪০ হাজার ৫৪১টির।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন গতকাল বুধবার সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো জেলার বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ও ত্রাণ তৎপরতা–সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে এসব উল্লেখ করেছেন। তবে বন্যা পুরোপুরি কমে গেলে চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে বলে জানান তিনি।

টাকার অঙ্কে ঘরবাড়ির ক্ষতি কত—এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি এই মুহূর্তে বলা কঠিন। তবে আগামী সপ্তাহে আমরা বরাদ্দ পাব এবং ঘরবাড়ি সংস্কারে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সরকারি সহায়তা দেওয়া শুরু করব।’

বন্যায় জেলায় ২৫ হাজার ২০৪টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বন্যায় ১ হাজার ৬৪২টি গবাদিপশু মারা গেছে। এর মধ্যে গরু ৪২২টি, মহিষ ৩৭টি, ছাগল ৬৬৯টি ও ভেড়া ৫১৪টি।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় জেলায় ২৫ হাজার ২০৪টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। বন্যায় ১ হাজার ৬৪২টি গবাদিপশু মারা গেছে। এর মধ্যে গরু ৪২২টি, মহিষ ৩৭টি, ছাগল ৬৬৯টি ও ভেড়া ৫১৪টি। এ ছাড়া বন্যায় ২৮ হাজার ৮০৫টি মুরগি ও ৯৭ হাজার ৮৩১টি হাঁস মারা গেছে। বন্যায় জেলায় এ পর্যন্ত ৩৮৪ কিলোমিটার সড়ক, ১৫৫টি সেতু–কালভার্টের সংযোগ সড়ক এবং ৪টি সেতু-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এখনো বিভিন্ন স্থানে পানি আছে। তাই বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হবে।

বন্যায় সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতা সম্পর্কে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এ পর্যন্ত জেলায় প্রধানমন্ত্রীর স্বেচ্ছাধীন তহবিল থেকে নগদ ৫৫ লাখ টাকা, ৫০ হাজার ১২ প্যাকেট গুঁড়া দুধ পাওয়া গেছে। এসব নগদ টাকা ও সামগ্রী প্রতিটি উপজেলায় বন্যাদুর্গতদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া ১ হাজার ৩৫৬ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। নগদ টাকা পাওয়া গেছে ১ কোটি ৮০ লাখ ৯৩ হাজার টাকা।

ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এ পর্যন্ত বরাদ্দ পাওয়া ১১ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, সাড়ে ১৪ কেজির খাদ্যসামগ্রীর ২৮ হাজার বস্তা , ১০ লাখ টাকার শিশুখাদ্য এবং আরও ১০ লাখ টাকার গোখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যাদুর্গতদের মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে ৭ হাজার ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে । এর বাইরে বেসরকারিভাবে এ পর্যন্ত নগদ ১৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ২ লাখ ৬১ হাজার ৯৩৬ প্যাকেট খাবারের পাশাপাশি ২৬ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জে আবার পানি বাড়ছে
সুনামগঞ্জে গত ১৬ জুন থেকে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। মাঝখানে এক সপ্তাহ বিরতি দিয়ে আবার ২৭ জুন থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হওয়ায় আবার নামছে পাহাড়ি ঢল। এতে আবার পানি বাড়তে শুরু করেছে। তিন দিনে সুরমা নদীর পানি ৩২ সেন্টিমিটার বেড়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলায় সরকারি হিসাবে বন্যায় সাড়ে চার লাখ মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তবে সচেতন মানুষ বলছেন, স্মরণকালের ভয়াবহ এই বন্যায় সুনামগঞ্জে ৯৫ ভাগ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, এখনো বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানি আছে। কিছু মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। বৃষ্টি হওয়ায় কোথাও কোথাও পানি কিছুটা বেড়েছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টি থামলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে।