সুনামগঞ্জে বাঁধ বাঁচাতে রাতভর কাজ করেছেন স্থানীয়রা

হাওরের একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ পরিদর্শন করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। গতকাল রাতে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার আঙ্গারুলি হাওরে
ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে ফসল রক্ষায় স্থানীয় লোকজন হাওরের বিভিন্ন বাঁধে সারা রাত কাটিয়েছেন। বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে গতকাল সোমবার সারা রাত তাঁরা বাঁশ ও বস্তা দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করেছেন। কোনো কোনো হাওরে উপজেলা প্রশাসন, পাউবো কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিরাও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে ছিলেন।

ফসল রক্ষা বাঁধে অবস্থান নিয়ে সেগুলোর নজরদারি ও রক্ষায় কাজ করার জন্য গতকাল রাতে গ্রামে গ্রামে মসজিদে মাইকিং করা হয়েছে। এদিকে সুনামগঞ্জে গতকাল রাতে ও আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বৃষ্টি না হলেও উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত আছে।এতে জেলার নদ-নদী ও হাওরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে।

পাউবো কর্মকর্তারা বলছেন, উজানের (ভারতের চেরাপুঞ্জি) বৃষ্টিই ভয়ের মূল কারণ। সুনামগঞ্জে তেমন বৃষ্টি নেই। কিন্তু চেরাপুঞ্জিতে ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ি ঢল নামছে।

জেলার প্রধান নদী সুরমার পানি বিপৎসীমা ছুঁয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টায় পানির উচ্চতা ছিল ৬ মিটার। শুধু সুরমা নয়, জেলার যাদুকাটা, রক্তি, বৌলাই, পাটলাই, নলজুর, কালনি, চলতি, ধারাইন, চেলাসহ সব নদ–নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গত ছয় দিনের উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে জেলার তাহিরপুর উপজেলার বোরো ফসল। গত শনিবার এই উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের একটি বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যায়। পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত থাকায় এখন জেলার সব হাওরের ফসলই ঝুঁকির মুখে আছে। গত দুই দিনে সদর উপজেলার ছোট কানলার হাওর, শাল্লা উপজেলার মুনয়ারখলা হাওরে ঢলের পানি ঢুকে ফসল তলিয়ে গেছে।
পর প্রকৃতির ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে।’

হাওরে তলিয়ে যাচ্ছে বোরো ধান। আজ মঙ্গলবার সকালে কানলার হাওরে
ছবি: প্রথম আলো

গতকাল রাতে শান্তিগঞ্জ উপজেলার শালদিঘা হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দিলে বাঁধটি চরম ঝুঁকিতে পড়ে। এলাকার মসজিদের মাইকে সেটি প্রচার করলে রাতেই কয়েক শ কৃষক বাঁধে গিয়ে সংস্কারকাজ করেন। গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করে বাঁধটি আপাতত ঝুঁকিমুক্ত করা হয়েছে।

খবর পেয়ে রাতেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ার উজ জামান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নূর হোসেন ঘটনাস্থলে যান। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার আঙ্গারুলি হাওরের একটি বাঁধ ছিদ্র হয়ে হাওরে পানি ঢোকার খবর পেয়ে ইউএনও সাদি উর রহিম জাদিদ সেখানে যান। পরে স্থানীয় লোকজন নিয়ে সেটি দ্রুত সংস্কার করেন। এদিকে তাহিরপুর উপজেলার মাটিয়ান হাওরের বরুঙ্গামারা এলাকায় স্থানীয় লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে সেটির সংস্কারকাজ করেন ইউএনও মো. রায়হান কবির।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণাসিন্ধু চৌধুরী বলেন, ‘পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত আছে। তাই ফসলের ঝুঁকি বাড়ছে। আমরা দিনরাত কৃষকদের নিয়ে মাঠে আছি।’

হাওরের কৃষকেরা বলছেন, তাঁরা ২০১৭ সালের মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন। কারণ, হাওরে ধান পাকতে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগবে। ২০১৭ সালে এই সময়েই হাওরের সব কাঁচা ধান তলিয়ে গিয়েছিল। যদি ঢল নামা অব্যাহত থাকে, তাহলে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)যেসব বাঁধ দিয়েছে, তাতে ফসল রক্ষা হবে না।

সুনামগঞ্জের খরচার হাওরের একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ
ছবি: প্রথম আলো

পাউবো কর্মকর্তারা বলছেন, উজানের (ভারতের চেরাপুঞ্জি) বৃষ্টিই ভয়ের মূল কারণ। সুনামগঞ্জে তেমন বৃষ্টি নেই। কিন্তু চেরাপুঞ্জিতে ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ায় পাহাড়ি ঢল নামছে।

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহরুল ইসলাম বলেন, প্রশাসন, পাউবো কর্মকর্তাসহ সবাই মাঠে আছেন। যেখানে যা যা প্রয়োজন, ফসল রক্ষার স্বার্থে সব করা হবে। এবার সুনামগঞ্জে ৭২৭টি প্রকল্পে ৫২০ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ হয়েছে। এতে বরাদ্দ আছে ১২১ কোটি টাকা। তাঁরাও মাঠে কাজ করছেন।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এতে ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার ফসল উৎপাদন হওয়ার কথা।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমরা হাওরের ফসল রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করছি। তবে এখনো বড় কোনো হাওরে পানি ঢোকেনি। কিন্তু যেভাবে উজানের ঢল নামছে, সেটা অস্বাভাবিক। প্রশাসন, পাউবো কর্মকর্তা, কৃষক, জনপ্রতিনিধি—সবাই মাঠে আছেন। তবে সবকিছুর