সুনামগঞ্জে বালুমহাল খুলে দেওয়ার দাবিতে ব্যবসায়ী-শ্রমিকদের মানববন্ধন

সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীর বালু মহালগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে ব্যবসায়ী-শ্রমিকদের মানববন্ধন। আজ মঙ্গলবার দুপুরে নদীর ঘরকাটি এলাকায়
প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীতে থাকা তিনটি বালুমহাল খুলে দেওয়ার দাবিতে আজ মঙ্গলবার নদীতীরে মানববন্ধন করেছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা। দুপুরে নদীর ঘরকাটি এলাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের ব্যানারে এই মানববন্ধন হয়।

মানববন্ধনে ব্যবসায়ী-শ্রমিকেরা বলেন, জেলার তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীর লাউড়ের গড় সীমান্ত এলাকায় তিনটি বালুমহাল আছে। এসব মহালে তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার অনন্ত ৩০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। পাশাপাশি এই বালু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন এলাকায় হাজারো ছোট-বড় ব্যবসায়ী। এখান থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় বালু যায়। কিন্তু ইজারা না হওয়ায় এক বছর ধরে তিনটি বালুমহাল বন্ধ রয়েছে। যে কারণে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা বিপাকে পড়েছেন। পাশাপাশি সরকার প্রতিবছর অন্তত ১০ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মানববন্ধনে জানানো হয়।

মানববন্ধনে ব্যবসায়ী-শ্রমিকেরা আরও বলেন, এমনিতেই করোনার কারণে তাঁরা চরম দুর্ভোগে আছেন। তার ওপর বালুমহালগুলো বন্ধ থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শ্রমিকেরা। গত এক বছর বালু উত্তোলন না হওয়ায় মহালগুলোতে উজান থেকে ঢলের সঙ্গে নেমে আসা বিপুল পরিমাণ বালু জমেছে। এতে নদীর নাব্যতাও কমে গেছে। যে কারণে এবার ঢল এলে নদীর তীর উপচে এলাকার আমন জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

যাদুকাটা নদীর শ্রমিক সমিতির সভাপতি সাহেদ মিয়া বলেন, বালুমহাল ইজারা না হলেও এলাকার একটি প্রভাবশালী পক্ষ নানাভাবে বালু উত্তোলন করে সেগুলো বিক্রি করে। বিভিন্ন সময়ে নদীতে প্রশাসনের অভিযান হওয়ায় কারণে অনেকেই রাতে নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলন করছেন। এতে এলাকায় নদীভাঙন দেখা দেওয়ার পাশাপাশি পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু মহাল ইজারা হলে তখন এসব অপকর্ম হয় না। মানুষ নিয়ম মেনেই নদী থেকে বালু উত্তোলন করেন। এতে এলাকার হাজার হাজার ব্যবসায়ী ও শ্রমিক উপকৃত হন।

এলাকার লামাশ্রম গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী জহির মিয়া বলেন, ‘আমরা চাই সরকারের নিয়মনীতি অনুযায়ী মহালগুলো ইজারা হোক। মানুষ যেন নদীর কোনো ক্ষতি না করে বালু উত্তোলন করতে পারে। এতে সরকার যেমন রাজস্ব পাবে, তেমনি সাধারণ ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরাও তাঁদের জীবন-জীবিকা চালাতে পারবেন।’

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এই বালুমহালগুলো প্রতিবছর জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা দেওয়া হয়। গত বছর ইজারা দেওয়ার সময় একটি পক্ষ সীমানা-সংক্রান্ত জটিলতা দেখিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করে। যে কারণে প্রশাসন ইজারা দিতে পারেনি। এবার প্রশাসন থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবার মহালগুলো ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করলে উচ্চ আদালতের আরেকটি স্থগিতাদেশের কারণে এই প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়।

জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জসিম উদ্দীন বলেন, ‘গত বছর মামলার কারণে এসব বালুমহাল ইজারা হয়নি। এবার আমরা সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। কিন্তু আদালতের আরেকটি আদেশের কারণে এই প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছে। ওই আদেশের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ থেকে আপিল করা হবে। বিষয়টি নিষ্পত্তি হলেই বালুমহালগুলো খুলে দেওয়া যাবে।’