সুন্দরগঞ্জে তিস্তার ভাঙনে শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন

তিস্তা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাশিমবাজার গ্রামে।
ছবি: প্রথম আলো

দফায় দফায় বর্ষণ ও উজানের ঢলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। গত দুই দিনে ৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি, ১০০ একর আবাদি জমি ও অনেক গাছপালা বিলীন হয়ে গেছে।

ভাঙনের কবলে পড়া গ্রামগুলো হচ্ছে উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়নের উজান বোচাগাড়ি, পাঁচপীর খেয়াঘাট, তারাপুর ইউনিয়নের খোদ্দা, লাঠশালা এবং হরিপুর ইউনিয়নের কাশিম বাজার। ভাঙনের কারণে বর্তমানে অসংখ্য ঘরবাড়ি হুমকির সম্মুখীন। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে দুই শতাধিক মানুষ। আশ্রয়হীন মানুষ সরকারি জায়গা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, কেউ ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন, কেউ নদী থেকে দূরে নতুন করে একচালা ঘর তুলছেন। অনেকে আসবাব সরিয়ে নিচ্ছেন। হরিপুর ইউনিয়নের কাশিম বাজার গ্রামের আবদুল আজিজ (৪৫) বলেন, ‘গত সাত দিনে তিস্তার ভাঙনে আমার তিনটি ঘর ও বসতভিটা বিলীন হয়েছে। ঘরে থাকা জিনিসপত্র ভেসে গেছে। কিন্তু ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’

একই গ্রামের কৃষক জাহিদুল মিয়া (৫০) বলেন, ‘হামারঘরে জমাজমি, বাড়িভিটা সগি আচিল। নদী ভাঙি হামরাঘরে একন কিচুই নাই। কামলার কাম না করলে পেটোত ভাত যায় না। তোমরা বেশি করি নেকেন, সোরকার জানি নদী ভাঙ্গার হাত থাকি হামারঘরোক বাঁচায়।’

হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম বলেন, তাঁর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন ১০-১৫ ফুট পরিমাণ জায়গা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ভাঙন রোধে জোরালো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
চণ্ডীপুর ইউনিয়নের উজান বোচাগাড়ি গ্রামের কৃষক আবদুল হক (৫৫) বলেন, সাত দিনের ব্যবধানে তিস্তার ভাঙনে তাঁর চারটি টিনের ঘর, বসতভিটা ও ছয় বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। যেভাবে প্রতিদিন ভাঙছে, এভাবে ভাঙতে থাকলে অল্প দিনের মধ্যে গোটা গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কিন্তু ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
চণ্ডীপুর ইউপির চেয়ারম্যান ফুল মিয়া বলেন, দফায় দফায় বর্ষণ ও পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতিদিন ১০-১২ ফুট পরিমাণ এলাকা ভাঙছে। ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) তাগাদা দেওয়া হয়েছে।

গাইবান্ধা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, ওই সব গ্রামে ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ও বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।