সুফিয়াদের বাড়িতে এবার ঈদে পোলাও হবে

ঈদ উপহার পেয়ে খুশিমনে বাড়ি ফিরছে বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং গ্রামেছবি: প্রথম আলো

‘গত ঈদে কোনো বাড়িতেই পোলাও হয়নি। গেরামে দু দলে কাজিয়া হয়্যাছিল। করোনার ল্যাগা অভাবও ছিল। এবার ঈদের দিন পোলাও হবে। খুব মজা হবে। আমার খুব আনন্দ লাগছে।’

ঈদ উপহারসামগ্রীর মধ্যে পোলাওয়ের চাল পেয়ে এমন উচ্ছ্বাস দেখা গেল সুফিয়া খাতুনের মধ্যে। সে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। আজ রোববার প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় সুফিয়ার মতো বিদ্যালয়টির ৩১৮ জন শিক্ষার্থী পেয়েছে ঈদ উপহারসামগ্রী। আলোর পাঠশালা প্রাঙ্গণে সামাজিক দূরত্ব মেনে তিন দফায় এই উপহারসামগ্রী তুলে দেন বন্ধুসভার সদস্যরা।

উপহারসামগ্রীর মধ্যে ছিল ৪ কেজি ভাতের চাল, ১ কেজি করে আতপ চাল, চিনি, ডাল, লবণ, ১ লিটার সয়াবিন তেল, ২০০ গ্রাম লাচ্চা সেমাই, ৫০ গ্রাম গুঁড়া দুধ, ৩৫ গ্রাম গরম মসলা, ১টি সাবান, ১ প্যাকেট ডিটারজেন্ট পাউডার ও ১টি করে মাস্ক দেওয়া হয়। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের ১১ জন শিক্ষক-কর্মচারী ও বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক কানাই চন্দ্র দাসকে ঈদ উপহার হিসেবে পোশাক দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করা হয়। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং গ্রামে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে
ছবি: প্রথম আলো

গ্রাম্য মোড়ল কার্তিক কোল টুডুর সভাপতিত্বে ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জাতীয় পর্যায়ে কৃষি পদকপ্রাপ্ত ফলচাষি মতিউর রহমান, ঘুরে ঘুরে বিদ্যাদানকারী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তরিকুল ইসলাম, সমাজসেবী আমিনুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, গ্রাম্য মোড়ল লগেন সরেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আনোয়ার হোসেন, বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক সাদামনের মানুষ কানাই চন্দ্র দাস, বর্তমান প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর প্রমূখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলো বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ মাহমুদ, সাহিত্য সম্পাদক শিরিনা খাতুন, মানবসম্পদ সম্পাদক সোনিয়া খাতুন প্রমুখ।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বাবুডাইং গ্রামের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি পাঠশালালা ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি সুরেন কোল টুডু বলেন, ‘গাঁয়ের লোকের পোলাও খাওয়ার অভ্যাস নাই। খ্যায়া থাকলে দু-তিন বাড়িতে খ্যায়া থাকতে পারে। এবার সকলেই খাইবে। খুব আনন্দ হোইবে এবার। তুমরা গত বচ্ছরও করোনাতেও দুবার খাবার দিয়াছিলা হামরা ভুলিনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কেলাস টুয়ের ছাত্র জীবন টুডু। অর বাপ তসিলাল টুডু ভারতে যায়্যা ছ বছর থ্যাকা জেহেল খাঠছে। মা জোসনা মুরমু আর জীবন টুডুর কষ্ট খুব। অরা তো জীবনে পোলাও খায়নি। এবার খাইবে। খুব ভালো হইল।’

ঈদ উপহার নিয়ে বাড়ি ফিরছে বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক বিদ্যালয় দেখেছি। কিন্তু শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাদ্যসহায়তা দিতে দেখিনি।’ অনুষ্ঠানে ফলচাষি মতিউর রহমান ঘোষণা দেন, তিনি মাসে এক দিন আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীদের পুষ্টিকর খাবার দেবেন। ঘোষণা দিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমরা খুশি তো?’ শিক্ষার্থীরা তখন শিক্ষক নির্মল কোলের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে গেয়ে ওঠে—‘আহ কী আনন্দ আকাশে বাতাসে... ।’ আনন্দঘন হয়ে ওঠে পরিবেশ।

প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ছাত্রী যমজ বোন তিলকা হাসদা ও সনোকা হাসাদার মা সুশিলা মার্ডি দুই মেয়ের জন্য ঈদ উপহারসামগ্রী পেয়ে দারুণ খুশি। তিনি বলেন, ‘হামরাও এবার ঈদে পোলাও রানভো। তোমাদের নিমন্ত্রণ থাকল।’