সুবিধাবঞ্চিত, এতিম ও ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে অন্য রকম নববর্ষ উদ্‌যাপন

সুবিধাবঞ্চিত, এতিম ও পথশিশুদের নিয়ে অন্য রকম নববর্ষ উৎসবে শিশুদের মাঝে খাবার তুলে দিচ্ছেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক ও আকবরিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাসান আলী‌ আলাল। আজ শুক্রবার দুপুরে
সংগৃহীত

বগুড়ায় অন্য রকম আয়োজনে খ্রিষ্টীয় নববর্ষকে বরণ করে নিল সুবিধাবঞ্চিত, এতিম ও ছিন্নমূল পথশিশুরা। এ আয়োজন ছিল শহরের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য অন্য রকম এক মিলনমেলা। আজ শুক্রবার দুপুরে এসব শিশুর মধ্যে পরিবেশন করা হলো উন্নত মানের খাবার। তাদের দেওয়া হলো সানক্যাপ, মাস্কসহ নানা উপহার।

নতুন বছর উপলক্ষে ভিন্নধর্মী এই উৎসবের আয়োজন করে বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আকবরিয়া লিমিটেড এবং তাদের সহযোগী সেবামূলক প্রতিষ্ঠান আকবরিয়া কেয়ার। জেলা প্রশাসন চত্বরে আকবরিয়া লিমিটেডের আরেক সহযোগী প্রতিষ্ঠান আকবরিয়া অ্যাডমিন ক্যাফেতে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আকবরিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক হাসান আলী।

১০০ বছরের বেশি সময় ধরে আকবরিয়া হোটেল মধ্যরাতে অসহায় মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। এ জন্য মধ্যরাতে আলাদা রান্না হয়। প্রতিদিন গড়ে ১০০ অসহায় মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া হয়। ঝড়-বৃষ্টিবাদল বা প্রতিকূল আবহাওয়ায়ও এই মানবিক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয় না।

আয়োজকদের সূত্রে জানা গেছে, ১০০ বছর ধরে বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী আকবরিয়া হোটেলে প্রতিদিন মধ্যরাতে ছিন্নমূল মানুষকে খাবার পরিবেশন করে আসছে আকবরিয়া লিমিটেড। এর বাইরে অসহায় মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ, শীতবস্ত্র বিতরণসহ মানবিক নানা কার্যক্রম পরিচালনায় কাজ করছে সহযোগী প্রতিষ্ঠান আকবরিয়া কেয়ার। মানবিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এবার পথশিশুদের নিয়ে খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উৎসব উদ্‌যাপন করল তারা।

উৎসবে শহরের কয়েকটি এতিমখানার শিশুরা ছাড়াও রেলবস্তিতে থাকা সুবিধাবঞ্চিত ছিন্নমূল শিশুরা যোগ দেয়। এ সময় তাদের চোখে-মুখের আনন্দ উচ্ছ্বাস ও আবেগ ছিল চোখে পড়ার মতো। উৎসবে আসা শিশুদের শুরুতেই উপহার দেওয়া হয় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাস্ক ও নববর্ষের সানক্যাপ। দুপুরে শিশুদের মধ্যে পরিবেশন করা হয় বিশেষ খাবার। খাবারের মেনুতে ছিল শরবত, পোলাও, খাসি-গরুর রেজালা, ডিম, সালাদ, দই ও মিষ্টি। জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক ও আকবরিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাসান আলী নিজ হাতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে খাবার পরিবেশন করেন।

অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক বলেন, আকবরিয়া লিমিটেড অসহায় মানুষের জন্য অনবদ্য ও প্রশংসনীয় কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বছরজুড়ে প্রতি মধ্যরাতে সুবিধাবঞ্চিত ও ছিন্নমূল ভবঘুরে মানুষের মধ্যে রান্না করা খাবার পরিবেশন করে আকবরিয়া লিমিটেড ইতিমধ্যেই মানবতার এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। আর্তমানবতার সেবায় আকবরিয়া এখন বগুড়ার গর্বিত প্রতিষ্ঠান। সুবিধাবঞ্চিত ও এতিম শিশুদের নিয়ে নববর্ষ উৎসব উদ্‌যাপনও এক অনন্য নজির। এখানে আসা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে থাকা সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে উদ্যোগ নেওয়া গেলে একদিন এরাও জাতিকে বদলে দিতে পারবে, দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে।

আকবরিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাসান আলী বলেন, ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে আকবরিয়া হোটেলে মধ্যরাতে অসহায় মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন তাঁরা। এ জন্য মধ্যরাতে আলাদা রান্না হয়। প্রতিদিন গড়ে ১০০ অসহায় মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়া হয়। ঝড়-বৃষ্টিবাদল বা প্রতিকূল আবহাওয়ায়ও এই মানবিক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয় না। এর পাশাপাশি শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ, গরিব-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোসহ মানবিক এসব কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আকবরিয়া কেয়ার নামে আলাদা একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাঁদের। আকবরিয়া লিমিটেড ও আকবরিয়া কেয়ার যৌথভাবে এবার দুই শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত, এতিম ও পথশিশুদের নিয়ে নববর্ষ উৎসব উদ্‌যাপনের উদ্যোগ নেয়।