সুযোগ বুঝে কালভার্টের ভেতর দিয়ে ভারতে পাচার

আদালত
প্রতীকী ছবি

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভালো চাকরির প্রলোভনে সংগ্রহ করা হয় লোকজন। এরপর টাকার বিনিময়ে সুযোগ বুঝে কালভার্টের ভেতর দিয়ে পাচার করে ভারতে। পাচারের জন্য চক্রটি ফেনীর ফুলগাজীর আমজাদহাট ইউনিয়নের হাড়িপুস্করনী গ্রামের বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এলাকা বেছে নিয়েছে।

মো. সোহাগ মিয়া নামের চক্রের এক সদস্য আজ শুক্রবার ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামসাদ জাহান খানের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ বর্ণনা দেন বলে জানায় পুলিশ।

গতকাল বৃহস্পতিবার হাড়িপুস্করনী এলাকা থেকে সোহাগকে গ্রেপ্তার করে ফুলগাজী থানা-পুলিশ। তিনি ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাট ইউনিয়নের হাড়িপুস্করনী গ্রামের মৃত আবদুল খলিলের ছেলে। গত ৬ অক্টোবর এক শিশুসহ চার নারীকে পাচারকালে উদ্ধারের ঘটনায় করা মামলায় পুলিশ সোহাগকে গ্রেপ্তার করে।

ফুলগাজী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আকতার হোসেন প্রথম আলোকে জানান, সোহাগ জবানবন্দিতে আদালতকে জানিয়েছেন, মানব পাচারে তাঁরা বেশ কয়েকজন জড়িত। এর মধ্যে রিপন মিয়া, সলিম উল্যাহ ওরফে সলু মিয়া, সাইফুল ইসলাম ও ভুট্টু মিয়া নিয়মিত এ কাজ করেন। চক্রের প্রধান শুক্কুর আলী নামের এক ব্যক্তি। তিনি নড়াইল জেলার বাসিন্দা। শুক্কুর আলী দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভারতে চাকরির প্রলোভনে লোকজন সংগ্রহ করেন। তারপর ফেনীর ফুলগাজীর হাড়িপুস্করনী দিয়ে ভারতে পাচার করেন।

আদালত সূত্র জানায়, সোহাগ জবানবন্দিতে বলেন, পাচারের জন্য মাথাপিছু মাত্র দেড় হাজার টাকা পান তিনি। শুক্কুর আলীর হয়ে তিনি কাজ করেন। যার থেকে যা পারেন, টাকা নেন শুক্কুর। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শুক্কুর আলী লোকজনকে জড়ো করে তারা কখন ফেনী আসবে, ফোন করে সোহাগকে জানান। লোকজনকে ফেনীর মহিপাল নামিয়ে সদর হাসপাতাল মোড়ে নেওয়া হয়। সেখানে নির্দিষ্ট সিএনজিচালিত অটোরিকশা প্রস্তুত রাখা হয়। ওই অটোরিকশায় করে আমজাদ হাটের হাড়িপুস্করনী গ্রামের সীমান্তসংলগ্ন খামারবাড়িতে নিয়ে রাখা হয়। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করতে দেওয়া হয় লোকজনকে। এর মধ্যে সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) টহলের ওপর নজর রাখা হয়। সুযোগ বুঝেই দুই দেশের সীমান্তে পানি চলাচলের জন্য থাকা কালভার্টের ভেতর দিয়ে লোকজনকে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

সোহাগ মিয়া আদালতে আরও জানান, শুক্কুর আলীর লোক ভারতেও রয়েছে, যাদের এ পথে ভারতে পাঠানো হয়েছিল আগে। তাদের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেওয়া ও কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।

৬ অক্টোবর ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার আমজাদ হাট ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তসংলগ্ন হাড়িপুস্করনী গ্রাম থেকে ভারতে পাচারের সময় এক শিশু ও চার নারীকে উদ্ধার করেন বিজিবি সদস্যরা। তাঁরা হলেন নড়াইলের বাসিন্দা মুসলিমা খাতুন (৪০), শাসছুন্নাহার (৩৫), রেবেকা বেগম (৪৪), আলপনা আক্তার (৩০) ও তাঁর ছেলে মো. বায়েজিদ (৫)। চার নারী আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। এই ঘটনার তিন দিন পর মুন্সিগঞ্জের এক যুবককে উদ্ধার করে বিজিবি। তিনিও আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন।

ফেনীর ৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীন তারাকুচা সীমান্তচৌকির (বিওপি) কমান্ডার নায়েব সুবেদার মো. কামাল হোসেন বাদী হয়ে মানব পাচার আইনে পৃথক দুটি মামলা করেন। মামলায় সোহাগ মিয়া, রিপন মিয়া ও সলিম উল্লাহকে আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে ভালো চাকরির প্রলোভনে লোকজনকে টাকার বিনিময়ে ভারতে পাচার করেছে একটি চক্র।