সুলতানি আমলের শাহি মসজিদ

ঝিনাইদহের শৈলকুপার শাহি মসজিদ।  ছবি: প্রথম আলো
ঝিনাইদহের শৈলকুপার শাহি মসজিদ। ছবি: প্রথম আলো

সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহর ছেলে নাসির উদ্দিন নুসরত শাহ গৌড় থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে কয়েকটি দিন শৈলকুপায় অবস্থান করেন। শৈলকুপার কুমার নদের উত্তর পাড়ে দরগাপাড়ায় অবস্থান করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন ধর্মপরায়ণ শাহ সৈয়দ আরেফ এ রব্বানী ওরফে আরফ শাহ। পরে নুসরত শাহ চলে গেলেও এলাকাটিকে ভালোবেসে সেখানে থেকে যান আরফ শাহ, সঙ্গে থাকেন সৈয়দ আবদুল কাদের বাগদাদি আর আবদুল হাকিম। সেখান থেকে ধর্মপ্রচারের কাজ শুরু করেন। ঘটনাটি ইংরেজি ১৪৯৪ থেকে ১৫৪০ সালের কোনো এক সময়ের। ওই সময়ে ধর্মপরায়ণ আরফ শাহ সুলতানের নির্দেশে প্রতিষ্ঠা করেন এক মসজিদ, যা আজকের শাহি মসজিদ নামে পরিচিত। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা শহরের দরগাপাড়ায় এর অবস্থান। ১৫১৯ সালে বাবা সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহর মৃত্যুর পর নুসরত শাহ বাংলার সিংহাসনে বসেন। এ ঘটনা তিনি সুলতান হওয়ার আগে না পরে, তা জানা যায় না। ইতিহাস বই থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে মসজিদ কমিটি, আর সেই ইতিহাস বর্ণনা করেন বর্তমান মোতোয়ালি মীর মনোয়ার হোসেন।

শৈলকুপা উপজেলার কুমার নদের উত্তর পাড়ে অবস্থিত শাহি মসজিদ। সুলতানি আমলের স্থাপত্যকলার উল্লেখযোগ্য নিদর্শন রয়েছে তাতে। মীর মনোয়ার হোসেন জানান, মসজিদটি ছয় গম্বুজবিশিষ্ট। দেয়ালগুলো প্রায় সাড়ে ৫ ফুট প্রশস্ত। পূর্ব দেয়ালের দুটি করে মোট সাতটি প্রবেশপথ রয়েছে। পূর্ব দেয়ালের কেন্দ্রীয় প্রবেশপথের উত্তর পাশে একটি করে সরু মিনার আছে। এগুলো কোণের মিনারের চেয়ে কিছুটা বাঁকানো। ভেতরে পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব আছে। পাশের দুটি থেকে কেন্দ্রীয় মিহরাবের আকার একটু বড়। ভেতরে ৫ ফুট উঁচু, দুটি প্রস্তরস্তম্ভ ও চারপাশের দেয়ালের ওপর নির্মিত আছে ছয়টি গম্বুজ। চার কোণে আছে আরও চারটি মিনার। এগুলো গোলাকার এবং বলয়রেখা দ্বারা অলংকৃত।

মসজিদের পূর্ব দিকে একটি মাজার রয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, এটি আরফ শাহর মাজার। মসজিদ বা মাজারে কোনো শিলালিপি নেই।

শাহি মসজিদটি মধ্যযুগের স্থাপত্যকলার নিদর্শন। দেশ-বিদেশের ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিদিন এখানে অনেক মানুষ আসে। মসজিদটি সংস্কারের কারণে এর আদি কাঠামো সঠিকভাবে নিরূপণ করা যায় না। তবে এটি যে সুলতানি আমলের মসজিদ, তা সহজেই বোঝা যায়।