সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রার্থী ও ভোটারদের

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর সমর্থকেরা বাধা দিচ্ছেন। বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ মেয়র প্রার্থীরা। নির্বিঘ্নে নিজের ভোট দিতে পারা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন সাধারণ ভোটাররা। শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়াই নয়, পঞ্চম ধাপে কাল রোববার অনুষ্ঠেয় অধিকাংশ পৌরসভার বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও ভোটাররা সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জের ভৈরব ও জামালপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর সমর্থকেরা বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর প্রচারে বাধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোথাও কোথাও বিএনপির প্রার্থীর পোস্টার ছিঁড়েও ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর এজেন্টদের গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এখানে মেয়র পদে ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান মেয়র নায়ার কবির, বিএনপির প্রার্থী জহিরুল হক, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুল হক ভূঁইয়া (মোবাইল ফোন), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম (হাতুড়ি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আবদুল মালেক (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল করিম (নারকেলগাছ)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে জেলা শহরের দক্ষিণ মৌড়াইল এলাকার বালুর মাঠে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী মাহমুদুল হক ভূঁইয়ার সভায় ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা বাধা দেন। পরে মাহমুদুল সভা বাতিল করে এলাকায় গণসংযোগ করে চলে যান। সে সময় দক্ষিণ মৌড়াইলে নৌকার নির্বাচনী ক্যাম্পে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে। গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে জেলা শহরের মেড্ডার বাজার এলাকার নৌকার পক্ষের ছাত্রলীগের মিছিলে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

৪ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে প্রচারণায় বাধা, এজেন্টদের পুলিশি হয়রানি এবং নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেন ধানের শীষের প্রার্থী জহিরুল হক। তিনি অভিযোগ করেন, ‘ইতিমধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশির নামে নেতা–কর্মীদের অযথা হয়রানি করছে পুলিশ। আমার কর্মীদের ভয়য়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। যাঁদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ যাচ্ছে, তাঁদের কারও বিরুদ্ধে কোনো মামলা ও ওয়ারেন্ট নেই। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সরাসরি ইন্ধনে ও নির্দেশনায় পুলিশ প্রতিটি কেন্দ্রে আমার মনোনীত এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছে।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে নৌকার প্রার্থী বর্তমান মেয়র নায়ার কবির বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি মেনেই সব করা হচ্ছে। নৌকার জনপ্রিয়তায় তারা ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েছে।

জামালপুর জেলার জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর ও মাদারগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। চারটি পৌরসভায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে। তবে ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থীদের মাঠে তেমন কোনো প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেখা যায়নি। জামালপুর পৌরসভার নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী শাহ্ মো.ওয়ারেছ আলী মামুন তাঁর প্রচারে বাধা ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

জামালপুর পৌরসভার ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী শাহ্ মো.ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, ‘কোথাও সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নেই। এটি একটি প্রহসনের নির্বাচন। কোথাও প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেওয়া হয়নি। আমার কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’

জামালপুর পৌরসভার নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন ধানের শীষের প্রার্থীর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর প্রচারে পদে পদে বাধা দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে পোস্টার। ভোটের দিন ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট না হওয়ার জন্যও চাপ দেওয়া হচ্ছে।