সুস্থ হয়ে আবার ডানা মেলার অপেক্ষায় আহত লালচে বুক ইগল

উদ্ধার করা লালচে বুক ইগল। আজ রোববার মৌলভীবাজারের কালেঙ্গায় সোলের কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

অচেনা একটি পাখি আহত অবস্থায় পড়েছিল রাস্তার মধ্যে। এক ব্যক্তি পাখিটি উদ্ধার করে খবর দেন বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে। বন বিভাগের লোক এসে পাখিটি উদ্ধার করে নিয়ে যান। বর্তমানে পাখিটির জায়গা হয়েছে একটি বন্য প্রাণী সেবাকেন্দ্রে। সেখানে সেবা-শুশ্রূষায় সুস্থ হয়ে আবার ডানা মেলার অপেক্ষায় বিরল প্রজাতির আবাসিক লালচে বুক ইগল পাখিটি।

গত শুক্রবার রাতে মৌলভীবাজার শহরতলির কালেঙ্গা এলাকা থেকে পাখিটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রয়াত বন্য প্রাণী গবেষক তানিয়া খান প্রতিষ্ঠিত সেভ আওয়ার আনপ্রোটেক্টেড লাইফ (সোল) বন্য প্রাণী সেবাকেন্দ্রে পাখিটি রাখা হয়েছে।

উদ্ধার হওয়া লালচে বুক ইগলের ছবি দেখে পাখি ও বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ রেজা খান প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘উদ্ধার হওয়া লালচে বুক ইগলটি অপরিণত বয়সের। দুই থেকে চার বছর বয়স বা পরিণত বয়সে তাদের বুক ও পেটে লালচে রং আসে। এটি চট্টগ্রামের মিশ্র চিরসবুজ বনের আবাসিক পাখি। আমার ধারণা, সিলেট বিভাগে লালচে বুক ইগল পাওয়ার এই প্রথম রেকর্ড।’

সোলের তত্ত্বাবধায়ক ও পাখিটির পরিচর্যাকারী সাদেক রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এর আগে এই এলাকাতে এ রকম পাখি দেখা যায়নি। পাখিটি নতুন। রাস্তার মধ্যে পাখিটি বসেছিল। রাস্তা থেকে একটি বাড়িতে নিয়ে রাখা হয়। খবর পেয়ে কালেঙ্গা এলাকার ওই বাড়ি থেকে পাখিটি উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে। পাখিটির ডান পায়ে ক্ষত ছিল। ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ বেঁধে দেওয়ার পর আস্তে আস্তে সুস্থ হয়ে উঠছে। ক্ষত অনেকটা শুকিয়েছে।

সাদেক রহমান বলেন, পাখি সম্পর্কে ধারণা না থাকায় প্রথম দুদিন মাছ দেওয়া হয়েছিল, সে কিছু খায়নি। এরপর কোয়েল পাখি খেতে দেওয়া হচ্ছে। এখন স্বাভাবিকভাবে খাচ্ছে। আগের চেয়ে অনেক সতেজ হয়ে উঠেছে।

উদ্ধার করা লালচে বুক ইগল। আজ রোববার মৌলভীবাজারের কালেঙ্গায় সোলের কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ‘রেড লিস্ট অব বাংলাদেশ’ বইয়ের পাখিপর্যায়ে এই পাখির পরিচিতিতে বলা হয়েছে, পাখিটিকে ইংরেজিতে রুফাস বেলিড ইগল এবং বাংলায় লাল পেট ইগল বা লালচে বুক ইগল বলা হয়ে থাকে। এটি বাংলাদেশের একটি বিরল আবাসিক প্রজাতির পাখি। বাংলাদেশের চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকাতে এদের বাস। বান্দরবন ও রাঙামাটিতে পাখিটি পাওয়ার রেকর্ড আছে। এরা সাধারণত বনের মধ্যে জোড়ায় ও একা থাকে। এরা বনের ধারের স্তন্যপায়ী, পাখি ও সরীসৃপ ধরে খায়। বনভূমি কমে যাওয়া এবং নগরায়ণের ফলে এই প্রজাতি এখন ঝুঁকিতে। সারা বিশ্বেই এদের সংখ্যা কমে আসছে। আইইউসিএন বাংলাদেশ লালচে বুক ইগলকে বিপদগ্রস্ত (ভালনারেবল) পর্যায়ভুক্ত চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশ ছাড়া ভুটান, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামে পাখিটির আবাস আছে।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ মৌলভীবাজার রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম সারওয়ার রোববার প্রথম আলোকে বলেন, পাখিটি আহত ছিল। পায়ে ক্ষত আছে। পরিচর্যা করা হচ্ছে। সুস্থ হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে অবমুক্ত করা হবে।