সৃজনশীল গণিতের ধাক্কা চট্টগ্রাম বোর্ডে

বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অর্জনের খবরে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষার্থীদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস
বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অর্জনের খবরে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষার্থীদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস

জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় প্রথমবারের মতো চালু হওয়া সৃজনশীল গণিতে ধাক্কা খেল চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড। এ কারণে গতবারের তুলনায় এবার বোর্ডে পাসের হার কমেছে। কমেছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। তবে টানা চতুর্থবারের মতো এবারও চট্টগ্রামের সেরা ২০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রথম স্থান ধরে রেখেছে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়।
গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১ লাখ ৫০ হাজার ৬১৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৫৩ জন। পাসের হার ৮৪ দশমিক ২৯ শতাংশ। গতবার এই হার ছিল ৮৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হাজার ৪৮৭ জন শিক্ষার্থী। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১৪ হাজার ১০৫।
বেলা ১১টায় ফলাফল ঘোষণার পর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পীযূষ দত্ত সাংবাদিকদের বলেন, প্রথমবারের মতো গণিতে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হওয়ায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। তবে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হওয়ায় ভালো হয়েছে। এবার শুরুতে কিছু ছাত্র পিছিয়ে পড়লেও আগামী দিনে এ সমস্যা থাকবে না।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরসহ জেলায় এবার পাসের হার কমেছে। মহানগরে পাসের হার ৯০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। গতবার ছিল ৯১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। চট্টগ্রাম জেলায় গত বছরের পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ হলেও এবার দাঁড়িয়েছে ৮২ দশমিক ৩৫ শতাংশে। এ ছাড়া কক্সবাজারে ৮৬ দশমিক ২০, রাঙামাটিতে ৮৩ দশমিক ০৬, খাগড়াছড়িতে ৮০ দশমিক ২৯ ও বান্দরবানে ৭৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছরের তুলনায় এবার এই চার জেলাতেই পাসের হার কমেছে।
বোর্ডের সামগ্রিক ফলাফলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে পীযূষ দত্ত বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবারের পাসের হারে আমি খুব বেশি পার্থক্য দেখি না। আমার মতে, ফলাফল গতবারের মতোই হয়েছে। যদি পাসের হার ৭০ শতাংশে নেমে আসত, তাহলে মনে করতাম ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে।’
ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসমত জাহান প্রথম আলোকে বলেন, এবার যুক্ত হওয়া নতুন দুটি বিষয়ের মধ্যে চারু ও কারুকলায় গ্রামগঞ্জে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। আর গণিতে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হলেও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সবাই প্রশিক্ষণ পাননি। আর পেলেও হয়তো তাঁরা শ্রেণিকক্ষে তা প্রয়োগ করতে পারেননি। আর এসবের নেতিবাচক প্রভাবই বোর্ডের সামগ্রিক ফলাফলে পড়েছে।
বোর্ডে এবারও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত িশক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ভালো করেছে। ছাত্রীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ হাজার ৬৮৬ জন। ছেলেদের মধ্যে এই সংখ্যা ৪ হাজার ৮০১ জন। তবে ছাত্রদের পাসের হার ৮৬ দশমিক ১৬ শতাংশ। ছাত্রীদের ক্ষেত্রে এ হার ৮২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
বোর্ডের অধীনে এক হাজার ১২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে এবার শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে ১৪৬টিতে। গতবার ১০৫টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করে।
প্রতিবারের মতো এবারও সেরা ২০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মহানগরের বিদ্যালয়গুলোর প্রাধান্য লক্ষ করা গেছে। এবারও প্রথম স্থান ধরে রেখেছে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের ৩১৮ ছাত্রীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩০৪ জন। তবে সবাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। বিদ্যালয়ের জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী মাহিয়া শানিন, প্রাপ্তি বড়ুয়া ও হৃদিতা বড়ুয়া জানায়, ভালো ফল করতে পারায় তারা খুবই খুশি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসমত জাহান বলেন, শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব ছিল। আর শিক্ষক ও অভিভাবকেরাও ফলাফলের ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। এ কারণেই ভালো ফলাফল হয়েছে।

চট্টগ্রাম বোর্ডে তৃতীয় হয়েছে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। ভালো ফলের আনন্দে এভাবেই ক্যামেরাবন্দী হয় শিক্ষার্থীদের কয়েকজন
চট্টগ্রাম বোর্ডে তৃতীয় হয়েছে বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। ভালো ফলের আনন্দে এভাবেই ক্যামেরাবন্দী হয় শিক্ষার্থীদের কয়েকজন