ঢাকার অদূরে সাভারের বলিয়ারপুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের দুজন বিজ্ঞানীসহ চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় ওই রাতেই সাভার মডেল থানায় মামলা হয়। এতে সেইফ লাইন পরিবহনের দায়ী বাসটির চালককে আসামি করা হয়। কিন্তু রুট পারমিট, ফিটনেস ও ট্যাক্সের মেয়াদোত্তীর্ণ বাসের মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় হাইওয়ে পুলিশের পদক্ষেপের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ঘটনায় বাসমালিকের বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ ছিল বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
এ ছাড়া ঘটনার প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর সাভার হাইওয়ে থানার পুলিশ জানতে পারে, সেইফ লাইন পরিবহনের ওই বাসের চালকের রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে এবং রাজধানীর শেরেবাংলা থানার পুলিশ প্রাথমিক সুরতহাল করে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। এটি পুলিশের গাফিলতি উল্লেখ করে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
দুর্ঘটনায় নিহত পূজা সরকারের দেবর সপ্তক নন্দী প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের বারবার আশ্বস্ত করা হচ্ছে, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন যদি দায়িত্বে গাফিলতি করা হয়, তবে সেটি হবে খুবই দুঃখজনক। ওই বাসের বৈধ কাগজপত্র নেই বলে আমরা শুনেছি। ফলে সেটির মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে, এর দায় মালিক এড়াতে পারেন না এবং এ ক্ষেত্রে মালিককে মামলার আসামি করতে হবে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের চেয়ারম্যান তাপস কুমার দাশ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যথাযথ অভিযোগ দায়েরের জন্য পুলিশ সচেষ্ট থাকলে বাসের সব তথ্য যাচাই করে সেগুলোর ভিত্তিতে মামলা করতে পারত। বাসের রুট পারমিট না থাকলে, ফিটনেস নবায়ন না করা থাকলে, এটি এক ধরনের প্রাণঘাতী অস্ত্রের মতোই বিপজ্জনক।
তাপস কুমার দাশ আরও বলেন, ছয়-সাত বছর ধরে সেইফ লাইন পরিবহনের বাসটি সড়কে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই চলেছে। একে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়নি। এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামগ্রিক অব্যবস্থাপনার একটি চিত্র মাত্র। যার ফলে চারটি প্রাণের অকালমৃত্যু হলো।
ঘটনার পর ওই দিন রাতে সাভার হাইওয়ে থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. ফজলুল হক বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এর তদন্তভার দেওয়া হয় একই থানার এসআই মো. গোলাম মোস্তফাকে। শেরেবাংলা থানার পুলিশ ওই বাসচালকের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে গতকাল সোমবার সন্ধ্যার পর জানতে পারেন তিনি।
এসআই গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁরা বিষয়টি আগে আমাদের জানাননি। নিয়ম অনুযায়ী ঘটনা যে এলাকায় ঘটেছে, সেখানকার থানাকে বিষয়টি অবহিত করা উচিত ছিল।’
বাসের মালিককে আসামি না করার প্রসঙ্গে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথমে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে বাসটির বৈধ কাগজপত্র ছিল কি না। সেটি না থাকলে মালিক মামলার আসামি হয়ে যাবেন।’
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, গত রোববার সকাল নয়টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের বলিয়ারপুর এলাকায় কুষ্টিয়া থেকে একটি গরুবোঝাই ট্রাক ও সেইফ লাইন পরিবহনের একটি বাস ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। বাসটি চলন্ত অবস্থায় প্রথমে বাঁ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসকে ধাক্কা দিয়ে ডান পাশে থাকা গরুবোঝাই ট্রাকটিকে সামনের দিকে ধাক্কা দিয়ে সড়ক বিভাজকের ওপর দিয়ে মহাসড়কের আরিচামুখী লেনে চলে আসে। এ সময় বিপরীত লেনের আরিচামুখী বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের একটি স্টাফ বাসের সামনের দিকে সজোরে ধাক্কা দেয় সেইফ লাইনের বাসটি। এতে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের দুজন বিজ্ঞানী, একজন প্রকৌশলী ও স্টাফ বাসের চালক নিহত হন। আহত হন ১৫ থেকে ২০ জন।