সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলায় ব্যাংক কর্মকর্তা বিকাশ রঞ্জন সরকারকে (৫৫) মারধর, অবরুদ্ধ করে রাখা ও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদ, হিন্দু যুব পরিষদ ও হিন্দু ছাত্র পরিষদ সিলেট জেলা ও মহানগর এবং সুনামগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে এ মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।
বাংলাদেশ হিন্দু যুব পরিষদ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অমর চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক সেন্টু রঞ্জন করের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বাংলাদেশ হিন্দু পরিষদের সহসভাপতি দীপক রায়, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রবাল দেবনাথ, সিলেট হিন্দু আইনজীবী পরিষদের সভাপতি বিকাশ রঞ্জন অধিকারী বক্তব্য দেন। মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করেন হিন্দু যুব পরিষদ সিলেট জেলার সভাপতি নিপু দাস, সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার পাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজন রায় চৌধুরী, হিন্দু যুব পরিষদ সিলেট মহানগরের প্রতিনিধি বিবু দাস, সিলেট জেলা ছাত্র পরিষদ সাধারণ সম্পাদক সানু দেবনাথ, মহানগর ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিমল অধিকারী।
প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বক্তারা বলেছেন, বিকাশ রঞ্জন সরকারকে শারীরিক নির্যাতন ও আপত্তিকর গালিগালাজ করে হিন্দুধর্মকে অবমাননা করা হয়েছে। কোনো সভ্য সমাজ এমন অনাচার মেনে নিতে পারে না। তাই বিকাশ রঞ্জন সরকারের ওপর বর্বরোচিত হামলার বিচার এবং পরবর্তী সময়ে তাঁর ওপর দায়ের করা সাজানো মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
সুনামগঞ্জ-১ আসনের (ধরমপাশা, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ) সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেনের বড় ভাইকে না জানিয়ে জমি বিক্রি করায় ৩ মে দুপুরে উপজেলার পাইকুরাটি নতুন বাজারে বিকাশ রঞ্জন সরকারকে মারধর করা হয়। এতে সাংসদের ভাই মোশারফ হোসেন (৫৮) ও ভাতিজা তানভীর হোসেন (২৪) নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মারধরের পর বিকাশ রঞ্জনকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। মোশারফ হোসেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক।
বিকাশ রঞ্জন সরকারের বাড়ি পাইকুরাটি গ্রামে। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে ধরমপাশা উপজেলা সদরে বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ে পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত। মারধরের ঘটনায় বিকাশ রঞ্জন সরকার ৪ মে রাতে ধরমপাশা থানায় সাংসদের ভাই ও ভাতিজার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। ৫ মে রাতে সাংসদের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত পাইকুরাটি গ্রামের বাসিন্দা পিন্টু দে (৩২) নামে এক ব্যক্তি থানায় বিকাশ রঞ্জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেন। মামলায় পিন্টু দে অভিযোগ করেন, বিকাশ চার মাস আগে পাইকুরাটি নতুন বাজারে ৪ শতক জমি ১০ লাখ টাকায় বিক্রির দাম ধরে তাঁর কাছে থেকে তিন লাখ টাকা বায়না নিয়েছিলেন। এক মাস পর বাকি টাকা নিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। ২ মে বাজারে বিকাশকে পেয়ে পিন্টু জমি দলিল করে দেওয়ার কথা বললে তিনি তা অস্বীকার করেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন।
এ প্রসঙ্গে বিকাশ রঞ্জন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি পিন্টুর কাছ থেকে কোনো টাকা নেননি বা হুমকিও দেননি। তাঁকে মারধর, আটকে রাখা ও প্রাণনাশের চেষ্টার অভিযোগ এনে সাংসদের বড় ভাই ও ভাতিজাকে আসামি করে থানায় মামলা করার পরিপ্রেক্ষিতেই পিন্টু এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলে মামলা করেছেন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোতে ‘অন্যের জমি দখল করে সাংসদের হাওর বাংলা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিকাশ রঞ্জন সরকার বলেন, এরপর থেকেই সাংসদ ও তাঁর লোকজন ক্ষুব্ধ।
প্রতিবেদনটিতে বিকাশের অভিযোগ ছিল, পাইকুরাটি ইউনিয়নের নওধার গ্রামে বানানো সাংসদের বিলাসবহুল বাড়ি ‘হাওর বাংলা’র ভেতরে আরেক ব্যক্তির জমির সঙ্গে তাঁরও ৩০ শতক জমি আছে। সাংসদ এসব দখল করে নিয়েছেন। এ ছাড়া সাংসদের দুই ভাইয়ের নামে তিনি ২ একর ৬৫ শতক জমি একবার দলিল করে দিয়েও কোনো টাকা পাননি। তখন সাংসদের পরিবারের সঙ্গে বিকাশ রঞ্জন সরকারের ঘনিষ্ঠতা ছিল।