সেতু ঝুঁকিতে ফেলে আ.লীগ কর্মীদের কোটি টাকা আয়

সাঘাটা উপজেলার দুটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত। প্রতিদিন দুই হাজার ট্রাক বালু উত্তোলন করা হয়।

সেতুর ২০০ মিটার এলাকার মধ্যে অবাধে চলছে বালু উত্তোলন। স্তূপ করে রাখা বালু কেটে বহন করছেন এক শ্রমিক। গত শনিবার গাইবান্ধার সাঘাটার মেলান্দহ সেতু এলাকায়।
ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধার সাঘাটায় বাঙালি নদীর ওপর মেলান্দহ সেতুর ২০০ মিটার এলাকার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে চলছে বালু উত্তোলন। সেতুটি বগুড়ার সোনাতলার সঙ্গে গাইবান্ধাকে যুক্ত করেছে। প্রায় ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটিকে ঝুঁকিতে ফেলে বালু উত্তোলন করছেন এক ইউপি সদস্যসহ তিনটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কয়েকজন কর্মী-সমর্থক।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনার এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বালু উত্তোলন করা যাবে না।

গত শনিবার দুপুরে দেখা যায়, সেতুর পাশে ২০০ মিটারের মধ্যে ১০–১২টি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত খননযন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। পাইপের মাধ্যমে বালু ফেলা হচ্ছে সেতুর উত্তর পাশে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কামালেরপাড়া ইউনিয়নের বলিয়ারবেড়, শিমুলবাড়িয়া, দহপাড়া এলাকায়। প্রতিদিন গড়ে এসব এলাকা থেকে দুই হাজার ট্রাক বালু উত্তোলন করা হয়। প্রতি ট্রাক বালুর দাম ২০০–২৫০ টাকা। সে হিসাবে বছরে বালু–বাণিজ্য হয় ১৮ থেকে ২০ কোটি টাকার।

ঘটনাস্থলের আশপাশে বসবাসকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত সাঘাটার কামালেরপাড়া ইউনিয়নের বলিয়ারবেড় গ্রামের জুলহাজ উদ্দিন, সানোয়ার হোসেন, সিরাজুল ইসলাম; দহপাড়ার মোনারুল ইসলাম, দুলাল হোসেন; শিমুলবাড়িয়ার ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম, লাবু মিয়া; ফলিয়া গ্রামের নিউটন, মোমিন; জালালতাইড় গ্রামের রিপন ও জুমারবাড়ি ইউনিয়নের বসন্তপাড়ায় বালু তুলছেন বালিয়াডাঙ্গি গ্রামের রনি।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে মোনারুল ইসলাম বলেন, নদীতে তাঁর পৈতৃক ১২ বিঘা জমি বিলীন হয়েছে। জীবিকা চালানোর মতো আর কোনো অবলম্বন না থাকায় নদী থেকে বালু তুলতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতি ট্রাক বালু বিক্রি করে ২০০–২৫০ টাকা পান। সে টাকার ভেতর থেকে আবার পুলিশ, প্রশাসনসহ শ্রমিকদের দিতে হয়।

মোনারুল বলেন, বালু উত্তোলনকারীদের মধ্যে তিনিসহ আরও বেশ কয়েকজন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী আছেন। আরেক বালু উত্তোলনকারী জুলহাস উদ্দিন বলেন, নদী থেকে বালু তুললেও সেতুর কোনো ক্ষতি হবে না। তা ছাড়া বালুর লাভের টাকার ভাগ প্রশাসনের লোকজনও পান।

এ বিষয়ে সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বেলাল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। তাঁদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও নেই। সাঘাটা, গোবিন্দগঞ্জ ও সোনাতলা—এই তিন থানার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করায় পুলিশ কিছু করতে পারছে না।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, সেতুটি দিয়ে গাইবান্ধার কয়েক হাজার মানুষ প্রতিদিন বগুড়াসহ রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করেন। ১৯৯৯ সালে নির্মাণকাজ শুরু হওয়া ২৬০ দশমিক ৭৬ মিটার দীর্ঘ সেতুটির উদ্বোধন করা হয় ২০১৫ সালে। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উদ্বোধনের অল্প দিনের মাথায় সেতুতে ফাটল দেখা দিলে পারাপারের সময় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। এরপর তা দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সেতু দিয়ে পারাপারের সময় ইজিবাইকচালক ও গাইবান্ধার জুম্মারবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সুরুজ মিয়া বলেন, সেতুতে ভারী যানবাহন উঠে পড়লে এমনিতেই কেঁপে ওঠে। সেতুর নিচে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ভূমিধসে সেতুর পিলারের দেবে যাওয়ার শঙ্কা আছে। দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন চললেও কেউ ব্যবস্থা নেয়নি।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সড়ক ও জনপথের (সওজ) গাইবান্ধা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ফিরোজ আখতার বলেন, বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য সওজের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হবে।