সেপটিক ট্যাংকে অটোচালকের লাশ, আরেক আসামির স্বীকারোক্তি

প্রতীকী ছবি

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার (ইজিবাইক) চালক রাব্বী মিয়াকে (২০) হত্যার দায় স্বীকার করে আরেক আসামি আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। স্বীকারোক্তি দেওয়া ব্যক্তির নাম মাছুম রানা (২৬)। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কিশোরগঞ্জ আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশিকুর রহমান ১৬৪ ধারায় তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এ নিয়ে দুই আসামি স্বীকারোক্তি দিলেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কিশোরগঞ্জ জেলা পরিদর্শক মো. মজিবুর প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আসামি মাছুম রানার উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের হাফানিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বাবার নাম আঙ্গুর মিয়া। মাছুমকে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কটিয়াদী উপজেলার বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিহত রাব্বীর বাড়িও পিরিজপুর ইউনিয়নেই, রুস্তমপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম নিলু মিয়া। গত ১৪ জুলাই রাব্বীর লাশ মাছুমের বাড়ির পাশের একটি সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

আরও পড়ুন

তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, মাছুম স্বীকারোক্তিতে জানান, ইজিবাইক ছিনতাই পরিকল্পনায় তাঁরা অংশ নিয়েছেন ৯ জন। সবাই পরস্পরের বন্ধু। করোনাকালে প্রত্যেকে কাজ হারান। কাজ না থাকায় প্রায় প্রতিদিন বিকেলে তাঁরা হাফানিয়া গ্রামের ঈদগা মাঠে জড়ো হতেন। ওই সময় আড্ডা দেওয়ার পাশাপাশি জীবন ও জীবিকা নিয়ে আলোচনা করতেন। একপর্যায়ে আয়ের সহজ পথ হিসেবে ইজিবাইক ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন তাঁরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৭ জুলাই বিকেলে তাঁরা ওই ঈদগা মাঠে জড়ো হন। সন্ধ্যায় ঈদগাসংলগ্ন সড়ক দিয়ে ইজিবাইক চালিয়ে যাচ্ছিলেন রাব্বী মিয়া (নিহত)। তাঁর রিকশায় তখন কোনো যাত্রী ছিলেন না। ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে রিকশাটি ভাড়া করেন আসামিরা। তাঁরা রিকশাটির আরোহী হয়ে দেড় ঘণ্টার মতো ঘুরে রাত সাড়ে আটটার দিকে আবার ঈদগা মাঠে ফিরে আসেন। এ সময় কৌশলে রাব্বীকে নির্জন জায়গায় নিয়ে তাঁরা রিকশার চাবি দিতে বলেন। চালক রাব্বী চাবি দিতে না চাইলে তাঁরা রাব্বীর নাক–মুখ চেপে ধরেন। এতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে রাব্বী অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর তাঁরা রিকশাটি ছিনতাই করে ওই রাতেই অষ্টগ্রাম উপজেলার রিয়াজুল মিয়া নামের এক ব্যক্তির কাছে রিকশাটি বিক্রি করে দেন।

রাব্বী হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাছুম রানার আগে সাচ্চু মিয়া (২৪) নামের এক আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। স্বীকারোক্তিতে নাম এসেছে, এমন বেশ কয়েকজন এখনো গ্রেপ্তার হননি। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মো. মজিবুর, তদন্তকারী কর্মকর্তা

আসামি মাছুম জবানবন্দিতে বলেন, তাঁরা ধারণা করেছিলেন রাব্বী মারা যাননি, কেবল অচেতন হয়ে পড়েছিলেন। অটোরিকশা বিক্রি করে রাতে তাঁদের কয়েকজন ওই স্থানে গিয়ে দেখতে পান রাব্বী মারা গেছেন। তখন সবাই ধরাধরি করে লাশ সরিয়ে এনে মাছুমের বাড়ির কাছে একটি সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে লাশটি ফেলে দেন। এক সপ্তাহ পর পুলিশ ওই সেপটিক ট্যাংক থেকে লাশটি উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধার হওয়ার পর নিহতের ভাই সাদেক মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বাজিতপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা মজিবুর বলেন, রাব্বী হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাছুম রানার আগে সাচ্চু মিয়া (২৪) নামের এক আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। স্বীকারোক্তিতে নাম এসেছে, এমন বেশ কয়েকজন এখনো গ্রেপ্তার হননি। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।