সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পদ্মায় আবার স্প্যান বসবে

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর ওপর আবার স্প্যান বসানোর কাজ শুরু হতে পারে।
ছবি: প্রথম আলো

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুর ওপর আবার স্প্যান বসানোর কাজ শুরু হতে পারে। নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে সেতুতে স্প্যান বসানোর কাজ বন্ধ রয়েছে। সবশেষ স্প্যান বসানো হয়েছিল গত ১০ জুন।

সেতু বিভাগের পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের মুঠোফোনে প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, জুনের মাঝামাঝি সময় থেকেই পদ্মা নদীতে অতিরিক্ত স্রোত। স্রোতে স্প্যান বহনকারী ক্রেনটি চলতে পারবে না। তাই স্প্যান বসানোর কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে স্প্যান প্রস্তুত রয়েছে। পদ্মার পানি ও স্রোত কমে গেলে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে স্প্যান বসানোর কাজ আবার শুরু করা হবে।

দেওয়ান আবদুল কাদের বলেন, ‘স্থাপনের জন্য সাতটি স্প্যান পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। বাকি তিনটি প্রস্তুত করা হচ্ছে। আশা করছি, ডিসেম্বরের মধ্যেই বাকি ১০টি স্প্যান বসানো হবে। সেতুর রোড স্ল্যাব, রেল স্ল্যাব ও গার্ডার স্থাপনের কাজ চলমান আছে।’

১০ জুন জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর ৩১তম স্প্যানটি বসানো হয়েছিল। তাতে সেতুর ৪ হাজার ৬৫০ মিটার দৃশ্যমান হয়। এরপর পদ্মা নদীতে অতিরিক্ত স্রোত থাকায় ভাসমান ক্রেন দিয়ে স্প্যান পিয়ারের (খুঁটি) কাছে নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ কারণে স্প্যান বসানোর কাজও থেমে যায়।

সেতু বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জাজিরার প্রান্তের নাওডোবায় পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি বসানোর মধ্য দিয়ে সেতু দৃশ্যমান হয়। এরপর তিন বছরে ৩১টি স্প্যান বসানো হয়েছে। এর মধ্যে জাজিরা প্রান্তেই বসানো হয়েছে ২০টি।

সেতুতে ৪২টি পিয়ারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। বাকি ১০টি স্প্যান ডিসেম্বরের মধ্যে বসানোর প্রস্তুতি ছিল সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু বন্যা, নদীভাঙন ও পদ্মায় অতিরিক্ত স্রোতের কারণে কাজ বাধাগ্রস্ত হয়।

প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টের সুপার টি-গার্ডার প্রিকাস্ট কংক্রিটিং কাজ শেষ করেছে গতকাল মঙ্গলবার।

জাজিরা প্রান্তের নয়টি স্প্যানে রোডওয়ে স্ল্যাব এবং ১৪টি স্প্যানে রেলওয়ে স্ল্যাব স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে।

সেতুর মোট ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ৮৭০টি, ২ হাজার ৯৫৯ রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে ১ হাজার ৪০০টি এবং ৪৩৮টি ভায়াডাক্ট গার্ডারের মধ্যে ১৯৫টি স্থাপন করা হয়েছে।

পদ্মা সেতুর রোড স্ল্যাবের গার্ডারে কংক্রিট ঢালাইয়ের কাজ চলছে। গতকাল মঙ্গলবার জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা থেকে ছবিটি তোলা।
ছবি: প্রথম আলো

মূল সেতুর কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বড় নির্মাণমাঠ রয়েছে (কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড) মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কুমারভোগে। গত ৩১ জুলাই বিকেলে সেখানে ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনে সেখানকার প্রায় ৩ দশমিক ৩৪ হেক্টর এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। সেখানে রাখা ১৯২টি রেলের গার্ডার (স্ট্রিনজার) ভেসে যায়। পদ্মা সেতুতে ব্যবহৃত এসব গার্ডার লুক্সেমবার্গ থেকে আনা। নদীতে ভেসে যাওয়ার পর নতুন করে গার্ডারের ফরমাশ দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এগুলো নির্মাণ করতে তিন মাস সময় লাগবে। বাংলাদেশে আসতে আরও এক মাস লাগবে।

এ ছাড়া যানবাহন চলাচলের পথ তৈরির কংক্রিটের ১২৫টি স্ল্যাব ভাঙনে ভেসে গেছে। এগুলো প্রকল্প এলাকাতেই তৈরি হয়। তবে নতুন করে এসব স্ল্যাব তৈরি করতে মাসখানেক সময় লাগতে পারে।

মূল সেতুর কাজ করছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)। আর নদীশাসনের কাজে নিয়োজিত আছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৮১ শতাংশ। এর মধ্যে মূল সেতুর কাজ হয়েছে ৮৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। নদীশাসনের কাজ এগিয়েছে ৭৪ শতাংশ।