সৈয়দপুরে গুদামে মজুত করা হচ্ছিল নিম্নমানের চাল

বস্তা থেকে চালের নমুনা যাচাই করে দেখছেন সৈয়দপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রমিজ আলম (ডান থেকে চতুর্থ)প্রথম আলো

নীলফামারীর সৈয়দপুরে সরকারি খাদ্যগুদামে নিম্নমানের চাল গুদামজাত করা হচ্ছিল। তবে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের হস্তক্ষেপে তা সংশ্লিষ্ট রাইস মিলে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। একই সঙ্গে এই রাইস মিলের সরবরাহ করা আগের চালও যাচাই করে দেখার দাবি করেছেন কয়েকটি মিলের মালিক।

জানা যায়, সৈয়দপুর সরকারি গুদামে চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৫ মেট্রিক টন চাল সংরক্ষণের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। সে অনুযায়ী সৈয়দপুর উপজেলাধীন চুক্তিবদ্ধ মিলমালিকদের মাধ্যমে চাল ক্রয় করার কথা। কিন্তু সৈয়দপুর খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ মেসার্স আফজাল অটো রাইসের মিলমালিকের কাছ থেকেই কেনে ১ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন চাল।

এরই অংশ হিসেবে আজ এই মিল থেকে ট্রাকে করে ১ হাজার ৩০০ টন চাল গুদামে আনা হয়। ৩০ কেজি ওজনের প্রায় ৪৪৪টি বস্তা ছিল ট্রাকে। যার মূল্য প্রায় ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৮০ টাকা। এই চাল অত্যন্ত নিম্নমানের ছিল। গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কোনো রকম যাচাই–বাছাই না করেই যোগসাজশের মাধ্যমে তড়িঘড়ি করে ট্রাকটি ভেতরে ঢুকিয়ে মাল খালাসের চেষ্টা করেন।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সৈয়দপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রমিজ আলম তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ট্রাকের চাল যাচাই করে দেখেন। সেখানে মিল থেকে সরবরাহ করা নমুনার সঙ্গে এই চালের মিল পাওয়া যায়নি এবং চালের রং লালচে পাওয়া যায়। তাই এসব চাল ফেরত পাঠান ম্যাজিস্ট্রেট।

একটি সূত্রমতে, আফজাল অটো রাইস মিল কর্তৃক সরবরাহ করা নিম্নমানের চাল আনার ক্ষেত্রে যাতে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি না হয়, সে জন্য গুদামের এক কর্মকর্তার নিজস্ব ট্রাক ব্যবহার করা হয়েছে—যা তদন্তের জন্যও দাবি জানিয়েছেন মিলমালিকেরাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এ ব্যাপারে মেসার্স আফজাল অটো রাইস মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের মিল মূলত অটো। যা সার্বিকভাবে বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। তাই কোনো সময় যদি মেশিন চালু অবস্থায় বিদ্যুৎ চলে যায়, তাতে কিছু ধান নষ্ট হয়। এই ধানের চালগুলোই মূলত লাল রঙের হয়ে থাকে। অনেক সময় এই চালগুলো আলাদা করা সম্ভব হয় না। এ ধরনের কিছু চাল কোনো কারণে এলএসডিতে চলে গেলে, তারা দেখে ফেরত দিলে আমরা তা পরিবর্তন করে দিই। মাঝেমধ্যে এমন হয়ে থাকে। তাই আজকের ঘটনা কোনো বড় ব্যাপার নয়।’

সৈয়দপুর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফজলুল হক বলেন, ‘মিলমালিকেরা চালসহ ট্রাক পাঠালে আমরা স্কেলে করে ওজন যাচাই করি এবং গুদামজাত করি। সে অনুযায়ী চাল গুদামজাত করাকালে কোনো মাধ্যমে খবর পেয়ে এসি ল্যান্ড সাহেবও এসেছিলেন এবং চালের নমুনার সঙ্গে মিল না থাকায় এবং চালগুলো লালচে হওয়ায় ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন।’

ইতিপূর্বেও আফজাল অটো মিল কর্তৃক সরবরাহ করা চাল যা গুদামজাত করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যেও নিম্নমানের ও লাল রঙের চাল রয়েছে, যা যাচাই না করেই গ্রহণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিষয়টি সঠিক নয়। কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে পারেন।’

সৈয়দপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. রমিজ আলম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপস্থিত হয়ে দেখতে পাই ট্রাকের চালগুলো লালচে রঙের এবং নমুনার সঙ্গে মিল নেই। এ কারণে ট্রাকসহ চাল ফেরত দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানানো হয়েছে।