সোনামসজিদ স্থলবন্দরে ভারতীয় ট্রাকচালকেরা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না

সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে পাথরবোঝাই ট্রাক নিয়ে এসেছিলেন এই ভারতীয় ট্রাকচালক। পণ্য খালাসের পর রাস্তায় মাস্ক না পরে দাঁড়িয়ে বা ট্রাকের ইঞ্জিনে বসে থাকেন তাঁরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ স্থলবন্দরের জিরো পয়েন্টের এক কিলোমিটার দূর থেকে তোলা ছবি
প্রথম আলো

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ স্থলবন্দর এলাকায় দোকানপাটে ভারতীয় ট্রাকচালক ও সহকারীদের আনাগোনা দুই দিন ধরে নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। ভারতীয় ট্রাকচালক ও ট্রাক থেকে পাথর নামানোর কাজে নিয়োজিত বাংলাদেশি শ্রমিকেরাও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। আজ রোববার ওই স্থলবন্দরে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

বেলা দুইটার দিকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে পাথরবোঝাই ট্রাক চোখে পড়ে। পাথর খালাস করার স্থানে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক ও ভারতীয় ট্রাকচালকদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। পাশেই পাথরের স্তূপ থেকে বাংলাদেশি ট্রাকে পাথর বোঝাই করছিলেন ২০ জন শ্রমিক। তাঁদের কারও মুখেই মাস্ক ছিল না।

ট্রাকে পাথর বোঝাই করার কাজে নিয়োজিত কয়েকজন শ্রমিক জানান, এ গরমে মুখে মাস্ক পরে কাজ করতে সমস্যার কারণে তাঁরা মাস্ক পরেননি। আধা কিলোমিটার দূরে গিয়ে পথের কাছে চোখে পড়ে ভারতীয় এক ট্রাকচালক ও তাঁর সহকারীকে। এই লকডাউনের সময় তাঁদের চিহ্নিত করতে বন্দর প্রশাসনের দেওয়া গলায় লাল ফিতা দেখা গেলেও কারও মুখেই মাস্ক ছিল না। তবে রোববার বেলা দুইটা থেকে সোয়া তিনটা পর্যন্ত বন্দরের আশপাশের দোকানপাটে ভারতীয় ট্রাকচালক ও তাঁদের সহকারীদের দেখা যায়নি।

পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের সীমানার বাইরে বন্দর এলাকায় ভারতীয় ট্রাকচালক ও সহকারীদের চলাফেরা অনেকটা কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।

সোনামসজিদ স্থলবন্দরের কয়েকজন শ্রমিক বলেন, পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের সীমানার বাইরে বন্দর এলাকায় ভারতীয় ট্রাকচালক ও সহকারীদের চলাফেরা অনেকটা কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।

পানামার বন্দর ব্যবস্থাপক (পোর্ট ম্যানেজার) মাইনুল ইসলাম বিষয়টি স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ভারত থেকে শত শত ট্রাকচালক আসেন। তাঁদের সবাইকে চোখে চোখে রাখা সম্ভব হয় না। তবে দুই দিন ধরে তাঁদের চলাফেরা একেবারেই কমে গেছে। কেবল পাথরবোঝাই ট্রাকের চালক ও সহকারীরাই বাইরে পাথর খালাস করার জন্য যেতে পারেন। অন্য পণ্যবোঝাই ভারতীয় ট্রাকচালকেরা পানামার সীমানার বাইরে বের হতে পারেন না। তাঁরা বাইরে হোটেলে খেতে যেতে পারেন না। নিজেদের আনা শুকনা খাবার খেয়েই তাঁরা পানামার ভেতরে অবস্থান করেন।

সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে আসছে পাথরসহ বিভিন্ন পণ্যবোঝাই ট্রাক। সীমান্তের বিজিবি চেকপোস্টে পিপিই পরে দায়িত্ব পালন করছেন বিজিবি সদস্যরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ জিরো পয়েন্টে
ছবি: প্রথম আলো

মাইনুল ইসলাম আরও বলেন, বর্তমানে প্রায় ৪৫০টি ট্রাক বন্দরের ভেতরে আছে। এসব ট্রাকের চালককে বন্দরে রাত যাপন করতে দেওয়া হয় না। সন্ধ্যার আগেই তাঁদের ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। মাল খালাস করার পর মুঠোফোনে তাঁদের ডাকা হয়। তখন তাঁরা এসে ট্রাক নিয়ে ভারতে চলে যান।

স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল আওয়াল প্রথম আলোকে বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিশেষ লকডাউন চালুর দিন ২৫ মে সোনামসজিদ পর্যটন মোটেলে কাস্টমস কর্মকর্তা, পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের কর্মকর্তা, আমদানি-রপ্তানিকারকদের গ্রুপ ও সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ভারতীয় গাড়িচালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য জিরো পয়েন্টে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসকের উপস্থিতি, ভারতীয় ট্রাক জীবাণুমুক্ত করার লক্ষ্যে স্প্রে করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ জিরো পয়েন্টে বিজিবি চেকপোস্টের কাছে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক। রোববার দুপুরে তোলা ছবি
প্রথম আলো

আবদুল আওয়াল আরও বলেন, ওই সভায় পাথরের প্রতিটি ইয়ার্ডে পাথর লোড-আনলোডে নিয়োজিত শ্রমিককে মাস্ক পরিধান করে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়। পণ্যবোঝাই ভারতীয় ট্রাকের প্রবেশ কমিয়ে আনতে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়, যা আগে ছিল সূর্যাস্ত পর্যন্ত। এ ছাড়া বন্দরে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে ৯ দফা নির্দেশনা মেনে চলার সিদ্ধান্ত হয়। বন্দরের শুল্ক কর্তৃপক্ষ ও বন্দরে আমদানি-রপ্তানি পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সংগঠন যার যার অবস্থান থেকে কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু নজরদারির অভাবে সব নির্দেশনা পুরোপুরিভাবে মেনে চলা সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে সোনামসজিদ স্থলবন্দরের সহকারী কমিশনার মমিনুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।