সোনারগাঁয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০

দুই পক্ষের সংর্ঘষের সময় বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামে
ছবি: মনিরুজ্জামান

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার ও বালু ভরাটকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার সকালে উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ওই ব্যক্তির নাম সমর আলী (৪৫)। তিনি একই গ্রামের বাসিন্দা। আহত ব্যক্তিদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা। সংঘর্ষের পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করেছে।

শনিবার দুপুরের পর সোনারগাঁ থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত তবিদুর রহমান বলেন, দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করা হয়েছে।

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নয়াগাঁও গ্রামের হাজি আলাউদ্দিনের সঙ্গে একই এলাকার ব্যবসায়ী সাদেকুর রহমান ওরফে সাদেক মোল্লার আধিপত্য বিস্তার ও একটি কোম্পানির বালু ভরাটকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এর জেরে শুক্রবার রাত ৮টার দিকে আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে কামাল, গোলজার, বাদল, আরিফসহ ২০-২৫ জনের একটি দল রামদা, বল্লম, চাপাতি, লোহার রড নিয়ে ব্যবসায়ী সাদেকুর রহমানের দোকানে হামলা চালান। হামলায় সাদেকুর রহমান, বরজাহান, রেখা, তাসলিমা, সায়বা, জাবেদ, জিসানসহ ১০ জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। সাদেকুর রহমানের স্বজনদের বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাদেকুর রহমানের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আলাউদ্দিনের পক্ষের লোকের বাড়িঘরে হামলা চালান। এ সময় উভয় পক্ষের লোকজন মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষে আলাউদ্দিন পক্ষের সমর আলী, জাহিদুল ইসলাম, মাহিলউদ্দিন, মোশারফ, নুর নবী, নিলা, দেলোয়ার হোসেন, আবদুল আলীসহ ৮ জন ও সাদেক পক্ষের খোরশেদ আলম, সাইদুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম, বিপ্লব, সুমন, শাকিল, মাহফুজ, ছোট সুমনসহ ১২ জন আহত হন। এঁদের মধ্যে আলাউদ্দিন পক্ষের সমর আলী সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর মারা যান।

সাদেকুর রহমানের স্ত্রী শেফালী বেগমের অভিযোগ, ‘শত্রুতার জের ধরে আমার স্বামীর দোকানে ৩০-৩৫ জন লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। আলাউদ্দিনের নির্দেশে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখম করে। শুক্র ও শনিবার সকালে দুই দফায় বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুর করে। আমাদের প্রায় ২০-২২ জনকে কুপিয়ে আহত করে।’

এ বিষয়ে আলাউদ্দিন বলেন, ‘তারা উচ্ছৃঙ্খল লোক। আমার আত্মীয় সমর আলীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। এর আগেও আমার এক ভাতিজাকে হত্যা করেছে ওরা। এ ঘটনায় মীমাংসার কথা বলে তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। শুক্রবার রাতে আমি বাড়ি ফেরার সময় আমার ওপর তারা হামলা করে। শনিবারও আমাদের লোকজনের বাড়িঘর ও দোকান ভাঙচুর করেছে।’

এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। কয়েক দিন পরপর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গত কোরবানি ঈদের আগের দিনও তাঁদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় নারীসহ প্রায় ২৫ জন আহত হয়েছিলেন। এই দুই পক্ষের জন্য সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। হাজি আলাউদ্দিনের ছেলে পুলিশ সদস্য হওয়ার কারণে তিনি প্রভাব বিস্তার করে এলাকার লোকজনকে জিম্মি করে রেখেছেন।