সোহাগ আলীর 'টিন-কৃষি'

টিনের চালের ওপর ফলের গাছের পরিচর্যা করছেন সোহাগ আলী। সম্প্রতি তেরোখাদিয়ার উত্তরপাড়ায়।  প্রথম আলো
টিনের চালের ওপর ফলের গাছের পরিচর্যা করছেন সোহাগ আলী। সম্প্রতি তেরোখাদিয়ার উত্তরপাড়ায়। প্রথম আলো

টিনের চালে ছোট ছোট টবে বেগুনগাছ। ধরে আছে থোকা থোকা লাল মরিচ। আরেক পাশে মুলা, পুঁইশাক ও করলায় ছেয়ে আছে টিনের চাল। রয়েছে মাল্টা, কমলা, আমড়া, পেয়ারা ও আমের ছোট গাছ। সেগুলোর কয়েকটিতে ফলনও চোখে পড়ার মতো। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয়স্বজনসহ প্রতিবেশীদেরও দেওয়া হয় এসব ফল ও শাকসবজি। ছাপরাঘরের টিনের চালের ওপর এ ধরনের চাষাবাদ অনেকেরই নজর কাড়ছে।

রাজশাহী মহানগরীর তেরোখাদিয়ার উত্তরপাড়া এলাকার মতিউর রহমানের ছেলে সোহাগ আলী তাঁর বাড়ির টিনের চালে এ চাষাবাদ করছেন। তিনি স্থানীয় একটি দৈনিকেরফটোসাংবাদিক। বাড়ির ছাপরাঘরে টিনের চালে এ ধরনের চাষাবাদ বছরখানেক ধরে শুরু করেছেন তিনি। তাঁর নিজের তেমন জায়গাজমি নেই। পাকা ভবনও নেই। আছে ছোটখাটো টিনের ছাপরাঘর। তাঁর ইচ্ছে হতো ফল ও শাকসবজি চাষ করার। পরে তিনি তাঁর ছাপরাঘরের টিনের চালাতেই ছাদকৃষির মতো চাষাবাদ করার সিদ্ধান্ত নেন।

সোহাগ বলেন, ‘আমার বাড়িতে জায়গা কম। গাছগাছালি লাগাতে আমার প্রচণ্ড রকমের ভালো লাগে। আমার একটা সময় মনে হলো, ঘরের টিনের চালে যদি লাউ–কুমড়াজাতীয় সবজির চাষ করা যায়, তবে অন্যান্য ফল ও সবজিও চাষ করা সম্ভব। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই এ জাতীয় চাষ শুরু করি।’ তিনি বলেন, যাঁদের বাড়িতে ফাঁকা ছাদ রয়েছে, তাঁরা চাইলে তাঁদের ছাদের ওপরে এর চাইতে আরও ভালোভাবে শাকসবজি ও ফল উৎপাদন করতে পারেন। তাতে নিজেদের প্রয়োজনে বিষমুক্ত সবজি ও ফলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। যাঁদের ছাদ নেই, তাঁরা এ ধরনের ঘরের টিনের চালার ওপরও শাকসবজি ও ফলমূলের চাষ করে নিজেদের প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে পারেন।

সোহাগ এ চাষপদ্ধতিকে ‘টিন–কৃষি’ নামে পরিচিত করতে চান। সোহাগ বলেন, ‘আমরা ভবনের ছাদে শাকসবজিসহ ফলদ গাছ লাগাতে দেখেছি। সে ধরনের ফলনকে ছাদকৃষি বলে। আর আমারটা ছাপরাঘরের টিনের চালের ওপর করা। তাই এর নাম টিন–কৃষি।’

সম্প্রতি সোহাগ আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত তিনি। তাঁর ছাপরাঘর ছেয়ে আছে সবুজে। পরিত্যক্ত বিভিন্ন পলিথিন ব্যাগ, সিমেন্টের বস্তা, তেলের জার, জারকিন কেটে সেগুলোতে মাটি ভরাট করে টব বানিয়েছেন। এর মধ্যে তিনি লাগিয়েছেন শাকসবজি ও ফলের গাছ। রয়েছে পুঁইশাক, মুলাশাক, বেগুন, করলা, মরিচ, লেবু, মালটা, আমড়া, পেয়ারাসহ অন্যান্য গাছ।

সোহাগ বলেন, মৌসুমভেদে তিনি বিভিন্ন গাছ রোপণ করেন। তিনি বেগুনের চারা দেখিয়ে বলেন, ‘বেগুন সব সময়ই চাষ করা যায়। তবে বর্ষাকালে এর ফলন ভালো। আবার শীতকালে টমেটো, ধনেপাতাসহ অন্যান্য সবজির চাষ ভালো হয়।’

স্ত্রী লুৎফুন নাহারও সোহাগের এ উদ্যোগে খুশি। তিনি বলেন, ‘ওর ভিন্নধর্মী উদ্যোগটি শুরু থেকেই আমার ভালো লেগেছে। শুরুতে খুব বেশি শাকসবজি, ফলমূল পাওয়া যেত না। কিন্তু এখন আমাদের নিজেদের খাওয়ার পরও প্রতিবেশীদের দিতে পেরে খুব ভালো লাগে।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রচার অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ছাদকৃষির অনেক কথা শুনি। কিন্তু টিনের চালার ওপর এ ধরনের চাষের কথা প্রথম শুনলাম। শহর এলাকায় নিম্ন, মধ্যম আয়ের মানুষদের পাকা ভবন নেই। তাই তাঁদের পক্ষে ছাদে আবাদ করা সম্ভব নয়। তাঁরা যদি টিনের চালার ওপর এ ধরনের চাষপদ্ধতি গ্রহণ করেন, সেটা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ হবে।’ তিনি আরও বলেন, রাজশাহীতে তাপমাত্রা অনেক বেশি। টিনের চালার ওপর শাকসবজি, ফলমূল চাষ করলে ঘরের ভেতরটাও ঠান্ডা থাকবে।