স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যায় টাঙ্গাইলে তিন যুবকের মৃত্যুদণ্ড

মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে তিন যুবককে আদালত থেকে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে নেওয়া হয়
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলে স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে তিন যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক খালেদা ইয়াসমিন এ রায় ঘোষণা করেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন গোপালপুর উপজেলার ভেঙ্গুলা গ্রামের শ্রীকৃষ্ণ দাস (২৯), ধনবাড়ী উপজেলার ইসপিঞ্জাপুর গ্রামের সৌরভ আহমেদ ওরফে হৃদয় (২৪) ও একই গ্রামের মিজানুর রহমান (৩৮)। মামলায় আরেক আসামি মো. মেহেদী হাসান ওরফে টিটুর (২৯) বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি আলী আহম্মেদ জানান, দণ্ডিত শ্রীকৃষ্ণ দাসের সঙ্গে ২০২১ সালে গোপালপুর উপজেলার জয়নগর গ্রামের খোদেজা খাতুন নামের এক স্কুলছাত্রীর মুঠোফোনে পরিচয় হয়। খোদেজা জয়নগর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। শ্রীকৃষ্ণ একটি সেলুনে নরসুন্দরের কাজ করতেন। তিনি নিজের নাম-পরিচয় গোপন করে সানি আহমেদ নামে খোদেজার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। গত বছরের ২ আগস্ট দুপুরে খোদেজা শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে গোপালপুর উপজেলা সদরে যায়। এ সময় শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর সহযোগী মিজানুর রহমান মোটরসাইকেলে করে খোদেজাকে পাশের ধনবাড়ী উপজেলার একটি বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে শ্রীকৃষ্ণ খোদেজাকে ধর্ষণ করেন। খোদেজা চিৎকার করার চেষ্টা করলে শ্রীকৃষ্ণ গলায় গামছা পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করেন। এ সময় তাঁর সহযোগী মিজানুর রহমান ও সৌরভ আহমেদ বাইরে পাহারা দেন।

আইনজীবী আলী আহম্মেদ বলেন, পরে তাঁরা তিনজন মিলে ওই রাতে খোদেজার লাশ বস্তায় ভরে ভূঞাপুর উপজেলার বীরবরুহা রাস্তার পাশে ফেলে রাখেন। পরদিন ভূঞাপুর থানা-পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। লাশের পরিচয় না পাওয়ায় পুলিশ বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটিকে কবর দেয়। পরে লাশ উদ্ধারের সংবাদ পেয়ে ৫ আগস্ট খোদেজার পরিবারের লোকজন ভূঞাপুর থানায় যান। তাঁরা ছবি ও পোশাক দেখে খোদেজাকে শনাক্ত করেন। এর পরদিন খোদেজার বাবা খোকন মিয়া বাদী হয়ে ভূঞাপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি আলী আহম্মেদ আরও বলেন, পুলিশ খোদেজার ব্যবহৃত একটি মুঠোফোনের কিছু নম্বরের সূত্র ধরে প্রথমে শ্রীকৃষ্ণ চন্দ্র দাসকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অন্য তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিরা সবাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। তদন্ত শেষে টাঙ্গাইল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের উপপরিদর্শক ফরহাদ হোসেন ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। মামলায় ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে রায় দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাঁদের টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। রায় শোনার পর মামলার বাদী খোদেজার বাবা খোকন মিয়া সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। রায় দ্রুত কার্যকরে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।