স্পিডবোটের মালিক, ইজারাদারসহ ৪ জনকে আসামি করে মামলা

পদ্মায় নোঙর করে রাখা বালুবাহী বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া স্পিডবোটটি
ফাইল ছবি

মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা নদীতে বালুবাহী বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় শিবচর থানায় মামলা করেছে নৌ–পুলিশ। এতে স্পিডবোটের মালিক, চালক, ঘাটের ইজারাদারসহ চারজনকে আসামি করা হয়। আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টায় প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন।

শিবচর থানা ও নৌ-পুলিশের সূত্র জানায়, বাংলাবাজার ফেরিঘাটের আসার পথে বালুবাহী বাল্কহেডের সঙ্গে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় এক নারী, তিন শিশুসহ ২৬ জন মারা যান। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে শিবচর উপজেলার চরজানাজাত নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) লোকমান হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় লৌহজং উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী খানের ছোট ভাই ও শিমুলিয়া ঘাটের ইজারাদার শাহ আলম খান, স্পিডবোটের মালিক চান্দু মিয়া ও জহিরুল ইসলাম ও স্পিডবোটটির চালক শাহ আলমকে।

আরও পড়ুন

ওসি মিরাজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাতে চারজনকে আসামি করে নৌ–পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। মামলাটি তদন্ত করবে নৌ–পুলিশ। আসামি ধরবেও তারা। প্রয়োজনে আমরা তাদের সহযোগিতা করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘চারজন আসামির কেউ এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার নেই। স্পিডবোটটির চালক পুলিশের নজরদারিতে চিকিৎসাধীন আছে। তার অবস্থা খুবই খারাপ। রাত দুটার দিকে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।’

জানতে চাইলে চরজানাজাত নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আবদুল রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলায় আসামি সবার বাড়ি মাওয়া এলাকায়। রাতে মামলা হলেও আজ সকাল থেকে আসামি ধরার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আসামিদের গ্রেপ্তারে নৌ–পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগসহ একাধিক টিম কাজ করছে। আশা করছি, খুব দ্রুতই মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মামলায় স্পিডবোটের বেপরোয়া গতিতে চলাচল, লাইসেন্সহীন, অতিরিক্ত যাত্রী বহনসহ একাধিক বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। এখন থেকে নৌপথে সব ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কঠোর অবস্থানে থাকবে নৌ–পুলিশ।’

আরও পড়ুন

গতকাল সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে ৩২ জন যাত্রী বহন করে মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজারের দিকে যাচ্ছিল স্পিডবোটটি। এটি বাংলাবাজার ফেরিঘাটের কাছাকাছি এলে ঘাটের কাছে নোঙর করা বালুবোঝাই একটি বাল্কহেডের পেছন দিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। মুহূর্তেই স্পিডবোটটি উল্টে বাল্কহেডের নিচে চলে যায়। খবর পেয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু ফায়ার সার্ভিস ও নৌ–পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন। ঘটনাস্থল থেকে ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সাঁতরে তীরে ওঠেন ছয়জন। তাঁদের উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে সেখানে এক নারীর মৃত্যু হয়। নিহত সবার মরদেহ রাখা হয় কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের দোতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। দুপুর থেকে শুরু হয় লাশের পরিচয় শনাক্তের কাজ। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার মধ্যেই সব কটি লাশের পরিচয় শনাক্ত শেষে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এ ঘটনায় মাদারীপুর স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজাহারুল ইসলামকে প্রধান করে ছয় সদস্যদের তদন্ত কমিটি করেছে জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে দাফন কাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তার দেওয়া হয়।

তদন্ত কমিটি স্পিডবোট দুর্ঘটনার কারণ উদ্‌ঘাটন করবে। দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তি ও কোম্পানিকে চিহ্নিত করবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, সে জন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশ আমাদের চেয়ারম্যান বরাবর দাখিল করা হবে।
মো. শাহাদাত হোসেন, সহকারী পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ), বিআইডব্লিউটিএর শিমুলিয়া ঘাট

অন্যদিকে, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকেও তিন সদস্যের একটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক ইকবাল আলমকে আহ্বায়ক করা হয়। এ তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

আরও পড়ুন

আজ সকালে বিআইডব্লিউটিএর শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ) মো. শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি স্পিডবোট দুর্ঘটনায় কারণ উদ্‌ঘাটন করবে। দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তি ও কোম্পানিকে চিহ্নিত করবে। এ ছাড়া ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, সে জন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশ আমাদের চেয়ারম্যান বরাবর দাখিল করা হবে।’