স্বজনদের নাম জানে না প্রতিবন্ধী ৭ শিশু

পিলু নামে তাকে ডাকা হয়। প্রকৃত নাম জানা নেই। বয়স আনুমানিক ১৫ বছর। মা-বাবা অজ্ঞাত। গায়ের রং কালো। উচ্চতা ৪ ফুট ৭ ইঞ্চি। বাঁ চোখের ভ্রুর পাশে কাটা দাগ।

এই জীবনবৃত্তান্ত বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী পিলুর। পিলুর ঠাঁই হয়েছে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক)। তার মতো আরও ছয় প্রতিবন্ধী রয়েছে কেন্দ্রটিতে।

কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক এই সাত বাক্-শ্রবণ ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশুর অভিভাবক ও ঠিকানা খুঁজে পেতে ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সংবাদপত্রে শিশুর ছবি প্রচারের অনুমতি চেয়ে আদালতে পৃথক সাতটি আবেদন করেন। আদালত এ পর্যন্ত ছয়জন শিশুর ছবি প্রচারের জন্য অনুমতি দিয়েছেন।

১৯৯২ সালে যশোর সদর উপজেলার পুলেরহাটে ছেলে শিশুদের জন্য শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে কেন্দ্রটি পরিচালিত হয়। সমাজসেবা অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী যশোরে আসনসংখ্যা ১৫০, তবে বর্তমানে সেখানে আছে ৩৪২ জন। এর মধ্যে প্রতিবন্ধী শিশু সাতজন।

কেন্দ্র সূত্র জানায়, সাতজন শিশুর মধ্যে পাঁচজন বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী, একজন বাক্প্রতিবন্ধী এবং একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। এরা কেউ অপরাধী নয়। ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি যশোরের কেশবপুর উপজেলায় পাওয়া যায় পিলুকে। ওই দিন কেশবপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। আদালত তাকে কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন।

বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী রুবেলের আনুমানিক বয়স ১৭ বছর। বাবার নাম মফেল উদ্দিন। মায়ের নাম অজ্ঞাত। উচ্চতা ৫ ফুট। নাকের ওপরে কাটা দাগ আছে। রুবেলকে ২০১৭ সালের ১১ আগস্ট লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা থেকে উদ্ধার করা হয়।আদালত তাকে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেন। রুবেল শুধু নিজের ও বাবার নাম লিখতে পারে।

তার নাম বোবা। কেন্দ্রের দেওয়া নাম। সে বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। বয়স আনুমানিক ১৫ বছর। মা-বাবা অজ্ঞাত। ২০১৯ সালের ২৭ এপ্রিল তাকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলা থেকে উদ্ধার করা হয়। তার গায়ের রং ফরসা। উচ্চতা আনুমানিক ৪ ফুট ৮ ইঞ্চি। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল জোড়া লাগানো।

বাক্প্রতিবন্ধী মো. আকিবের বয়স আনুমানিক ১৩ বছর। মা-বাবা অজ্ঞাত। ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তাকে খুলনার খালিশপুর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। তার গায়ের রং গাঢ় কালো। উচ্চতা আনুমানিক ৪ ফুট। তার ডান চোখের ভ্রুর ওপরে কাটা দাগ আছে। আকিব অস্পষ্টভাবে শুধু নিজের নাম বলতে পারে।

নাম বুববুব। বয়স আনুমানিক ১৭। বুববুব বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। মা-বাবা অজ্ঞাত। ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর তাকে গোপালগঞ্জ থেকে উদ্ধার করা হয়। তার গায়ের রং কালো। উচ্চতা আনুমানিক ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। তার বাঁ হাত ভাঙা এবং বাঁ হাতে বড় কাটা দাগ আছে।

আনুমানিক ১০ বছর বয়সের শিশুটির নাম নেই। সে বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। মা-বাবা অজ্ঞাত। ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি তাকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলা থেকে উদ্ধার করা হয়। তার গায়ের রং শ্যামলা। উচ্চতা আনুমানিক ৩ ফুট ২ থেকে ৩ ইঞ্চি। মুখে ছোট কাটা দাগ আছে।

১৭ বছর বয়সী আরেক প্রতিবন্ধীর ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। তার মা-বাবা অজ্ঞাত। ২০১২ সালের ১ অক্টোবর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। উচ্চতা আনুমানিক ৫ ফুট ২ ইঞ্চি। সে অস্পষ্টভাবে কথা বলে। শুধু নিজের নাম বলতে পারে।

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, প্রতিবন্ধী সাতটি শিশু অপরাধী নয়। তারা মা-বাবার কাছে ফিরতে চায়। এ জন্য প্রতিবন্ধী শিশুর অভিভাবক ও ঠিকানা খুঁজে পেতে ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সংবাদপত্রে শিশুর ছবি প্রচারের অনুমতি চেয়ে আদালতে পৃথক সাতটি আবেদন করেছি। আদালত এ পর্যন্ত ছয়টি শিশুর ছবি ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সংবাদপত্রে প্রচারের জন্য আবেদন মঞ্জুর করেছেন।