স্বাভাবিক জীবনে ফিরে নতুন ঠিকানা পেল ওরা সাতজন

সিলেট শহরতলির খাদিমপাড়ায় শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনবার্সন কেন্দ্রে আবাসিক সুবিধা পাওয়া সাত পথশিশু।প্রথম আলো

কখনো অলিগলি, কখনো জনসমাগমপূর্ণ স্থানে হাত পেতে কিংবা সহায়তা নিয়ে তাদের দিন কাটত। সঠিক পথের দিশা না পেয়ে বিপথগামীও হচ্ছিল কেউ কেউ। এমন সাত পথশিশুকে দীর্ঘদিন ধরে মানবিক পরিচর্যার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে নতুন ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। সিলেটের টেলিভিশন সাংবাদিকদের সংগঠন ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (ইমজা) মানবিক কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছে তারা।

ফাহিম মিয়া (৫), আলমগীর হোসেন (১২), সোহেল মিয়া (১০), মোশারফ হোসেন (১৪), হৃদয় (৮), শাহীনুর (১০) ও আবু বক্কর আকবর (৯) নামের এই সাত শিশুর ঠিকানা এখন সিলেটের শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনবার্সন কেন্দ্র।

ইমজা সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির পর খাদ্যসংকটে থাকা ছিন্নমূল ও ভাসমান মানুষকে নিয়ে কাজ করছিল সিলেটের বেশ কজন স্বেচ্ছাসেবী। তাদের সঙ্গে নিয়ে ইমজা পুরো ১০০ দিন সিলেটের কিনব্রিজ এলাকায় এক বেলা খাবার বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে যায়। খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির একপর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকদের নজরে আসে পথশিশুদের বিপথগামিতার বিষয়টি। এ রকম শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে আনার দায়িত্ব নেওয়ার মতো সরকারি প্রতিষ্ঠান থাকলেও নেশায় আসক্ত পথশিশুরা সেখানে যেতে ইচ্ছুক নয় বা গেলেও পালিয়ে যায়। অনেকে সুস্থ জীবনের চেয়ে ভিক্ষাবৃত্তিকেই সহজ রোজগারের পথ মনে করে। এসব শিশুকে মানবিক আচরণের মাধ্যমে সুস্থ জীবনে নিয়ে আসার বিষয়টি উপলব্ধি করে ইমজা। বৃহৎ পরিসরে না হলেও দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য গ্রহণ করা হয় ছোট একটি প্রকল্প।

প্রকল্পটির শুরুতে সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে ২০ পথশিশুকে রাখা হয় পর্যবেক্ষণে। তবে তাদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত সাতজনকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। এসব শিশুকে প্রথম থেকে এক বেলা খাবারের বদলে তিন বেলা খাবার দেওয়ার চেষ্টা চলে। নানাভাবে তাদের মানবিক কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা হয়। রূঢ়তার বদলে আন্তরিক ব্যবহার তাদের জীবনে প্রভাব ফেলে। এরপর জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এবং ক্রীড়া সংস্থার সহায়তায় সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামে প্রাথমিকভাবে তাদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়। দিনরাত এক করে তাদের বিনোদন, খেলাধুলা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন ইমজার স্বেচ্ছাসেবীরা। এতে অংশ নেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ঊষা ও অভিপ্রায়ের কর্মীরাও। নেওয়া হয় চিকিৎসকের পরামর্শ।

স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট শহরতলির খাদিমপাড়ায় শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনবার্সন কেন্দ্রের উপ–প্রকল্প পরিচালক নূরে আলম সিদ্দিকীর কাছে সাত শিশুকে হস্তান্তর করা হয়।

এই সাত পথশিশু যাদের ঠিকানা ছিল পথেঘাটে—এখন তারা নতুন ঠিকানা পেয়েছে। সে সঙ্গে পাবে বিশেষ সুযোগ–সুবিধা। এদের মতো সমাজের সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুরাও যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে, এমন প্রত্যাশা আমাদের।
সজল ছত্রী, সাধারণ সম্পাদক, ইমজা

এর আগে গত বুধবার মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামে সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে পেশাগত দায়িত্বের বাইরে গিয়ে ইমজার এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেন জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, নগর পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম, সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা তমির হোসেন চৌধুরী, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকরামুল কবির, আটাবের সাবেক সভাপতি আবদুল জব্বার জলিল, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমেদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেটের সাধারণ সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করেন জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক নিবাস দাস।

ইমজার সাধারণ সম্পাদক সজল ছত্রী বলেন, সংগঠনের সদস্যদের পেশাগত নিরাপত্তা, উৎকর্ষ ও সদস্যদের দুঃসময়ে ঐক্যের মাধ্যমে পাশের দাঁড়ানো ইমজার মূল লক্ষ্য হলেও করোনার সংকটে সমাজের সচেতন অংশ হিসেবে মানবিক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এই সাত পথশিশু যাদের ঠিকানা ছিল পথেঘাটে—এখন তারা নতুন ঠিকানা পেয়েছে। সে সঙ্গে পাবে বিশেষ সুযোগ–সুবিধা। এদের মতো সমাজের সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুরাও যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে, এমন প্রত্যাশা আমাদের।