স্বাভাবিক প্রসবে জটিলতা অনেক কমে যায়

ফৌজিয়া আক্তার

২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক ফৌজিয়া আক্তার। গত কয়েক মাস তিনি স্বাভাবিক প্রসবে অন্তঃসত্ত্বাদের উৎসাহী করতে চিকিৎসক ও সিনিয়র স্টাফ নার্সের নিয়ে কাজ করছেন। স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করানোর কাজে উৎসাহী করতে তিনি নার্সদের জন্য মাসিক পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে ফৌজিয়া আক্তারের সঙ্গে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: স্বাভাবিক সন্তান প্রসবের ওপর হঠাৎ গুরুত্ব দেওয়ার কারণ কী?

ফৌজিয়া আক্তার: স্বাভাবিক সন্তান প্রসব আগেও ছিল। এখন আমরা বিষয়টির ওপর একটু গুরুত্ব দিতে চাচ্ছি। স্বাভাবিক প্রসবকে আন্তর্জাতিকভাবে সব জায়গায় উৎসাহিত করা হচ্ছে। স্বাভাবিক প্রসবের পর জরায়ু দ্রুত সংকুচিত হয়। জরায়ু দ্রুত সংকুচিত হলে প্রসবের পর রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা কমে যায়। কিন্তু অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব হলে জরায়ু খুব ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়। এতে নতুন মায়েদের কিছু সমস্যা হয়। মায়েদের চলাফেরা ধীরগতির হয়ে যায়। শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। সব মিলিয়ে স্বাভাবিক প্রসবে জটিলতা অনেক কমে যায়।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনারা কাজটি কীভাবে করছেন?

ফৌজিয়া আক্তার: অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে আসেন। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য চারবার তাঁদের হাসপাতালে আসতে হয়। তখন আমরা তাঁদের প্রসবের আনুমানিক তারিখ, যোগাযোগ নম্বর সংগ্রহ করি। একটি ইডিডি (প্রসবের আনুমানিক তারিখ) রেজিস্ট্রারে সংরক্ষণ করি। প্রসবের সম্ভাব্য তারিখের ১৫ দিন আগে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। স্বাভাবিক প্রসবের জন্য হাসপাতালে তাঁদের উৎসাহিত করা হয়। তাঁদের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়, স্বাভাবিক প্রসবে কোনো জটিলতা দেখা দিলে হাসপাতালেই তাৎক্ষণিক অস্ত্রোপচার করার সুব্যবস্থা রয়েছে। কারণ, সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ নার্স থাকে। নবজাতক শিশুর কোনো সমস্যা হলে শিশু চিকিৎসক ও শিশু ওয়ার্ড রয়েছে। এসব বিষয় তাঁদের বোঝানো হয়। ফোন পেয়ে অন্তঃসত্ত্বারা ভরসা পাচ্ছেন। তাঁরা হাসপাতালে আসছেন। হাসপাতালে আসার পর অন্তঃসত্ত্বারা আমাদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে থাকেন।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: স্বাভাবিক প্রসবের এই কাজের সঙ্গে কারা কারা যুক্ত?

ফৌজিয়া আক্তার: হাসপাতালে আমিসহ ৯ জন স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যার চিকিৎসক এবং ১১ থেকে ১৩ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স মিলে কাজটি করা হচ্ছে। স্বাভাবিক প্রসব বাড়াতে সিনিয়র স্টাফ নার্সদের জন্য মাসিক পুরস্কার ঘোষণা করছি। যে বেশিসংখ্যক স্বাভাবিক প্রসব করাবেন, তাঁকে প্রথম পুরস্কার এবং ক্রমান্বয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী নার্সকে গত দুই মাস পুরস্কৃত করা হচ্ছে। গত দুই মাসে সর্বোচ্চসংখ্যক প্রসব করিয়ে প্রথম হয়েছেন সিনিয়র স্টাফ নার্স স্মৃতি রানী রায়। গত অক্টোবর মাসে হাসপাতালে সর্বোচ্চসংখ্যক ১০৮ জন অন্তঃসত্ত্বার স্বাভাবিক প্রসব হয়। গত নভেম্বর মাসে ১০৫ জন অন্তঃসত্ত্বার স্বাভাবিক প্রসব হয়।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: স্বাভাবিক প্রসবের বিষয়টি ভবিষ্যতে কীভাবে তদারকি করবেন?

ফৌজিয়া আক্তার: ইডিডি সংরক্ষণ করে রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। রোগীদের বোঝাতে হবে ক্লিনিকের তুলনায় সরকারি হাসপাতাল নিরাপদ। হাসপাতালে কোনো জটিলতা দেখা দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে অভিজ্ঞ চিকিৎসক, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা আছে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, অবেদনবিদ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট সব চিকিৎসক আছেন। এক ছাতার নিচে সব সুবিধা পাবেন তাঁরা।