স্বাভাবিক প্রসবের হার বাড়ছে

দিনাজপুরের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ৮ হাজারের বেশি নারী সন্তান প্রসব করেছেন। এর মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগই ছিল স্বাভাবিক প্রসব।

  • দিনাজপুরে ৭ হাজার ৮৪৯ জন নারী স্বাভাবিকভাবে সন্তানের জন্ম দেন।

  • জেলায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব হয়েছে ৮৩১টি শিশুর।

দিনাজপুরের ১৩ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে ভয়ভীতি দূর করে নারীদের স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিনা মূল্যে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ওষুধও সরবরাহ করা হচ্ছে। গত ১৬ মাসে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ৮ হাজারের বেশি নারী সন্তান প্রসব করেছেন। এর মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগই ছিল স্বাভাবিক প্রসব।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে গত ১৬ মাসে ৭ হাজার ৮৪৯ জন নারী স্বাভাবিকভাবে সন্তানের জন্ম দেন। জেলার ১৩টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে ৩টিতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা আছে। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে প্রসব হয়েছে ৮৩১টি শিশুর। যা শতকরা হিসাবে ১০ দশমিক ৫৮ ভাগ।

আজ ২৮ মে জাতীয় নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালন করা হচ্ছে। নিরাপদ মাতৃস্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস ও নবজাতকের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার এই দিবসটি পালন করে আসছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য, ‘মা ও শিশুর জীবন বাঁচাতে, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হবে যেতে’। এ উপলক্ষে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়সহ প্রতিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সচেতনতামূলক শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত বুধবার দুপুরে কন্যাসন্তান প্রসব করেছেন ইয়াসমিন আক্তার (৩০)। ওই দিন সকালেই শাশুড়ির সঙ্গে এসে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছিলেন। তৃতীয়বারের মতো মা হয়েছেন তিনি। স্বাভাবিক সন্তান প্রসব হওয়ার পরে মা-শিশু দুজনই সুস্থ আছেন। পরদিন দুপুরেই তাঁকে ছাড়পত্র দেয় কর্তৃপক্ষ।

ইয়াসমিনের বাড়ি নীলফামারী জেলার দারোয়ানী সোনাহার এলাকায়। স্বামী রিকশাচালক শাহীন হোসেন। দারিদ্র্যের কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারেননি তিনি। শেষ মুহূর্তে স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে আলট্রাসনোগ্রাম করেন। চিকিৎসক রিপোর্ট দেখে জানান, বাচ্চার ওজন বেশি, অস্ত্রোপচার করতে হবে। শুরু হয় ইয়াসমিন-শাহীন দম্পতির দুশ্চিন্তা। কীভাবে এত টাকা জোগাড় করবেন? পরে এক আত্মীয়র মারফত জানতে পারেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কথা। পরে সেখানে গিয়ে চিকিৎসক নার্স ও মিডওয়াইফের পরামর্শে স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব হয় ইয়াসমিনের।

খানসামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এ হাসপাতালে ১ হাজার ৯০৬ জন মা স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করেছেন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪১৫ জনের স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। চলতি বছরের শুরুতে হাসপাতালে অস্ত্রোপচার শুরু হয়েছে। মাত্র ১৬ জন ওই সেবা নিয়েছেন।

গতকাল শুক্রবার সকালে খানসামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি ওয়ার্ডের ইনচার্জ রমা রায় ও মিডওয়াইফ রুনা লায়লা বলেন, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তিনজনের স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব হয়েছে। শুধু এই উপজেলায় নয়, পাশের জেলা থেকেও অন্তঃসত্ত্বা নারীরা এখানে আসেন।

ইয়াসমিনের বিষয়ে তাঁরা বলেন, হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায়, শিশুর ওজন বেশি। সাধারণত শিশুর ওজন আড়াই থেকে চার কেজি হয়। কিন্তু ইয়াসমিনের বাচ্চার ওজন হয়েছিল সাড়ে চার কেজি। ইয়াসমিনকে শারীরিক কিছু ব্যায়াম করানো হয়। এরপর তাঁর স্বাভাবিক প্রসব হয়।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতি মায়েদের দেওয়া হয়েছে প্রসূতি কার্ড। সন্তান প্রসব হওয়ার আগপর্যন্ত অধিপরামর্শ প্রদান, বিনা মূলে ১৮০টি আয়রন ও ১৮০টি ভিটামিন বড়ি দেওয়া হচ্ছে। প্রসূতি কার্ডের মাধ্যমে হাসপাতাল থেকে বিনা মূল্যে ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।

খানসামা উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের ইতিবানু (২৩) বলেন, সম্প্রতি তিনি প্রথম সন্তানের মা হয়েছেন। হাসপাতালে নিয়মিত চেকআপ করেছেন। প্রসবের পরও কোনো সমস্যা হয়নি। মা-মেয়ে দুজনই ভালো আছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শামসুদ্দোহা মুকুল বলেন, স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে সফলতা এসেছে চিকিৎসক-নার্স-মিডওয়াইফদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। নিয়মিত প্রসূতি কার্ডের মাধ্যমে মায়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়। সর্বোপরি স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে এখন নারীদের নামমাত্র খরচ হচ্ছে। তাঁরা চেষ্টা করেছেন বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে স্বাভাবিক প্রসবের ভীতি দূর করতে।

জেলা সিভিল সার্জন এ এইচ এম বোরহান-উল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, সরকার নিরাপদ প্রসব, সুস্থ মা ও শিশুর জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সম্প্রতি স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে সফলতার প্রথম কারণ কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে মায়েদের ভীতি দূর করা, দ্বিতীয়ত, পার্টোগ্রাফি টুলস (যন্ত্র) ব্যবহার। এই যন্ত্র ব্যবহার করে প্রসবের অন্তত চার ঘণ্টা আগে বোঝা যায় প্রসূতি কতখানি ঝুঁকিতে আছেন। ঝুঁকির পরিমাণ বেশি হলে তাঁরা অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন।