স্বামীও হারালে কী হবে লিমার শিশুসন্তানদের?

হাসপাতালের বিছানায় লিমা আহমেদের স্বামী তানজির আহমেদ
ছবি: সংগৃহীত

‘যেখানে যাহার জড়ায়ে ধরেছি সেই চলে গেছে ছাড়ি’—পল্লিকবি  জসীমউদ্‌দীনের ‘কবর’ কবিতার এই পঙ্‌ক্তির সঙ্গে খুব মিলে যায় লিমা আহমেদের জীবনের গল্পটা। বাবার সংসার ছিল সাজানো এক বাগান। একে একে সবাই অকালে ঝরে পড়ে পরিবারটা ‘নাই’ হয়ে গেছে। বিয়ের পর স্বামীর সংসারে ছিলেন দারুণ সুখে। স্বামীকে আঁকড়ে ধরে সুখের সংসার গড়েছিলেন। সেই সংসারও এখন দুঃখের এক অথই সাগর। কারণ, গুরুতর অসুস্থ স্বামী আজ মৃত্যুপথযাত্রী। তিন সন্তানকে নিয়ে কী করবেন, ভেবে কিনারা পান না লিমা।

লিমার বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, মা গৃহিণী। প্রথমেই হারাতে হয়েছে মাকে। ক্যানসারের কাছে হেরে যান তিনি। মায়ের বয়স ছিল সবে ত্রিশের কোঠায়। মেয়ে লিমা তখনো বয়সে শিশু। মাকে হারানোর পর একইভাবে বাবাকেও হারাতে হয়েছে। হঠাৎ হৃদ্‌রোগে (হার্ট অ্যাটাক) আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। মা–বাবা না থাকলে অনেকের সহায় হয়ে ওঠেন ভাইয়েরা। কিন্তু সেই সৌভাগ্য নিয়েও জন্ম নেননি লিমা। একমাত্র ভাই ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। ক্যাডেট কলেজে পড়া শেষ করার পর কিসে কী হলো কে জানে? ভাইটা মানসিক সমস্যায় পড়লেন। শেষ পর্যন্ত তিনি মারা যান সড়কে ট্রাকের নিচে পড়ে।

এমনই হাসি–খুশির সংসার ছিল লিমা আহমেদের।
ছবি: সংগৃহীত

এভাবে পুরো পরিবার হারিয়ে লিমা নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। স্বামী মোল্লা তানজির আহমেদকে ঘিরে নতুন জীবন গড়ার চেষ্টা শুরু করেন লিমা। সেই প্রচেষ্টায় সফলও হন। তানজির ভাগ্যের সন্ধানে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। কয়েক বছরে কিছু টাকাপয়সা জমান। দেশে ফিরে ঢাকায় ইলেকট্রিক পণ্যের ব্যবসা শুরু করেন। বেশ ভালোই চলছিল তানজির-লিমার সংসার। সংসারে আসে দুই ছেলে ও এক মেয়ে। দিনগুলো ভালোই কাটছিল লিমার। কিন্তু দুঃসংবাদটা আসে গত বছরের ডিসেম্বরে। স্বামী তানজির হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরীক্ষায় ধরা পড়ে, তিনি জটিল হৃদ্‌রোগ ও কিডনি রোগে আক্রান্ত। দুটো কিডনিই নষ্ট।

রোগে ধরলে সহায়-সম্বল সব একে একে গিলতে থাকে। চিকিৎসার খরচাপাতি মেটাতে প্রথমে ব্যবসার পুঁজিতে হাত দিতে হলো। ধীরে ধীরে তানজিরের চিকিৎসার খরচ বাড়ে। নিরুপায় হয়ে বিক্রি করতে হয় নড়াইলে পৈতৃক জমিজমাও। এভাবে সব হারিয়ে নিঃস্ব হলেও রোগ তাড়াতে পারেননি। একপর্যায়ে পরিবার নিয়ে ঢাকা ছাড়তে হয়েছে তানজিরকে। এখন ঝিনাইদহে লিমার বাবার রেখে যাওয়া ছোট্ট একটা ঘরে দিন কাটছে পাঁচ সদস্যের পরিবারটির। আয়-উপার্জন শূন্যের কোঠায়।

মাঝেমধ্যে নিজেকে ব্যর্থ পিতা মনে হয়। মৃত্যু সবার জীবনেই আসবে। কিন্তু পরিবারের জন্য কিছু করে যেতে পারলাম না। এই বড় আক্ষেপ নিয়ে কবরে যেত হবে।
তানজির আহমেদ, ঝিনাইদহ

তানজির বলেন, ‘তিন সন্তান ও স্ত্রীকে কখনো অভাব বুঝতে দিইনি। এখন আমি একেবারে অসহায়। মাঝেমধ্যে নিজেকে ব্যর্থ পিতা মনে হয়। মৃত্যু সবার জীবনেই আসবে। কিন্তু পরিবারের জন্য কিছু করে যেতে পারলাম না। এই বড় আক্ষেপ নিয়ে কবরে যেত হবে।’

তানজিরকে যশোরে গিয়ে সপ্তাহে দুইবার কিডনির ডায়ালাইসিস করাতে হয়। টাকার অভাবে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করাতে পারছেন না। ফলে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে দ্রুত। দুই পা ফুলে গেছে। হাঁটতে পারেন না তানজির। এখন শুধু বিছানায় শুয়ে সময় কাটে।

শুরুতে পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন কাছের-দূরের কিছু স্বজন। তবে তাঁদের দেওয়া অল্পস্বল্প সহায়তায় কী-ই বা হয়? না চলে চিকিৎসা, না চলে সংসারের খরচ। তানজিরের উপযুক্ত চিকিৎসা এখন কিডনি প্রতিস্থাপন। কিন্তু সেই সামর্থ্যের ছিটেফোঁটাও নেই পরিবারটির। তাই দিনে দিনে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তানজিরের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে, আর লিমার দুচোখে নেমে আসছে রাশি রাশি অন্ধকার। মানুষটা অসুস্থ হলেও এখনো পাশে আছেন। তাঁর অবর্তমানে তিন সন্তানের কী হবে? সংসার চলবে কী করে? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজে পান না লিমা। স্বামী-সন্তানদের কাছ থেকে আড়ালে গিয়ে শুধুই কাঁদেন তিনি।

লিমা আহমেদ বলেন, ‘আমি আমার এই অসহায়ত্বের কথা কাউকে বোঝাতে পারব না। আসল অবস্থার কথা সবাইকে খুলে বলতেও পারছি না। আমার স্বামীর বেঁচে থাকাটা আমার সন্তানদের জন্য খুবই জরুরি। তাই আমি চাই, সবার সহযোগিতায় আমার স্বামী বেঁচে থাকুক। আমার সন্তানদের যেন আমার মতো অবস্থা না হয়।’

পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে চাইলে: জান্নাতুল ফেরদৌস, হিসাব নম্বর-১৬৪.১৫১.৪৯২৭৩২, ডাচ্- বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, মিরপুর সার্কেল-১০ শাখা, ঢাকা। বিকাশ নম্বর: ০১৭০৮৬৭৭৭৮১