সড়ক দুর্ঘটনায় একই গ্রামের ১০ জন হতাহত, গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল-আড্ডা সড়কে শনিবার সকালে ট্রাকের ধাক্কায় ভটভটির নিহত যাত্রী কৃষিমজুর আবদুল মালেকের মা, স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের আহাজারি। শনিবার দুপুরে গোমস্তাপুর উপজেলার নন্দলালপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নের নন্দলালপুর গ্রামে চলছে মাতম। পাশের নাচোল উপজেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তিনজন ও আহত ১০ জনই এ গ্রামের মানুষ। আজ শনিবার দুপুরের দিকে গ্রামটিতে দেখা যায়, নিহত তিনজনের বাড়িতে চলছে স্বজনদের আহাজারি। মানুষজন লাশের অপেক্ষা করছেন। সকাল সাড়ে আটটার দিকে সড়ক দুর্ঘটনা হলেও বেলা পৌনে তিনটার দিকেও ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ নিয়ে আসার অনুমতি মেলেনি। এমনিতে আজ প্রচণ্ড গরম। সন্ধ্যার আগে লাশ আসতে পারবে না, খবর পেয়ে মানুষজন ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সন্ধ্যা ছয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত গ্রামে লাশ পৌঁছেনি। নিহত লোকজনের পক্ষে লাশ নিতে আসা ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম বলেন, ‘সন্ধ্যা সাতটা-সাড়ে সাতটার আগে গ্রামে লাশ নিয়ে ফিরতে পারব না। ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ নেওয়ার জন্য জেলা সদরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি পেতে দেরি হয়েছে। গ্রামের লোকজন-আত্মীয়স্বজন সেই সকাল থেকে অপেক্ষা করছেন।’

নিহত তিনজন হলেন জাহেদুল ইসলাম (২৩), আবদুল মালেক (৪০), রেজাউল করিম (৪৫)। নিহত আবদুল মালেকের মামাতো ভাই বাবুল আলী বলেন, মালেক ছিলেন লেদমিস্ত্রি, জাহেদুল চট্টগ্রামে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। ধান কাটবেন বলে করোনা উপেক্ষা করে বাড়ি এসেছিলেন। রেজাউলও যখন যা পান, তখন তা-ই করতেন। ধান কাটার দুই মৌসুমে এলাকার গরিব মানুষেরা ধান কেটে মজুরি হিসেবে পাওয়া ধান দিয়ে সারা বছরের ভাতের ব্যবস্থা করেন। তাঁদের বিশ্বাস, ঘরে চাল থাকলে শাকপাতা, নুন দিয়ে ভাত খেয়ে হলেও অন্তত সারা বছর চালানো যাবে। এ জন্য অন্য পেশায় থাকলেও দুই মৌসুমে ধান কাটতেন তাঁরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল-আড্ডা সড়কে শনিবার সকালে ট্রাকের ধাক্কায় ভটভটির যাত্রী কৃষিমজুর রেজাউল করিম নিহত হন। তাঁর মেয়ে পপি বেগমের আহাজারি। শনিবার দুপুরে গোমস্তাপুর উপজেলার নন্দলালপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

নিহত জাহেদুল ইসলামের ভাই মো. ইসমাইল প্রথম আলোকে বলেন, একটি স্টিয়ারিং ভটভটিতে করে গ্রামের ৩২ জন কৃষিশ্রমিক নওগাঁর নিয়ামতপুরে বোরো ধান কাটতে যাচ্ছিলেন। নাচোল-আড্ডা সড়কের ধানসুরা মোড় অতিক্রম করার সময় আড্ডার দিক থেকে আসা একটি ট্রাক ভটভটিটিকে ধাক্কা দিলে তাঁর ভাইসহ তিনজন নিহত হন। তিনি ও তাঁর এক ভাই সহিদুল ইসলামও ওই ভটভটিতে ছিলেন। তবে তাঁরা সামান্য আহত হয়েছেন।

নিহত আবদুল মালেকের (৪০) দুই ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেদের একজন দশম শ্রেণি, অন্যজন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। রেজাউল করিমের (৪৫) দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। ছেলেদের একজনের বয়স ১৫ বছর ও অন্যজনের ১১ বছর। অভাবের কারণে বড় ছেলের পড়া বন্ধ। ছোটটা আলিয়া মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। নিহত জাহিদুল ইসলাম (২৩) এক বছর আগে বিয়ে করেন। তাঁর কোনো সন্তান নেই। মা-বাবার ভরণপোষণের দায়িত্ব ছিল তাঁর। নিহত এ তিনজনই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁদের ছাড়া পরিবারগুলো মারাত্মক সংকটে পড়বে বলে জানান গ্রামবাসী।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল-আড্ডা সড়কে শনিবার সকালে ট্রাকের ধাক্কায় ভটভটির যাত্রী কৃষিমজুর মো. জাহেদুল নিহত হন। তাঁর স্ত্রী মুক্তা বেগমের আহাজারি। শনিবার দুপুরে গোমস্তাপুর উপজেলার নন্দলালপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

নাচোল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, ভটভটিকে ধাক্কা মারা ট্রাক ও ভটভটিটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। দুটি যানের চালকই পলাতক। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
ওসি জানান, দুর্ঘটনায় আহত সাতজন হলেন তসিকুল ইসলাম (২০), মো. জাহিদুল (২০), আবদুল মান্নান (৫০), মো. তাজারুল (৪০), আবদুল বাশির (৪০), মো. আলাউদ্দিন (২০) ও মো. বুলবুল (২০)। তাঁরা সবাই চৌডালা ইউনিয়নের বাসিন্দা। এর মধ্যে মো. আলাউদ্দিন নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন ও মো. বুলবুলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি পাঁচজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাঁদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ওই পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

আরও পড়ুন