সড়কবাতি নেই, অন্ধকারে নগরের ৪২ পাড়া-মহল্লা

অন্ধকারাচ্ছন্ন সড়কে হাঁটতে আশপাশের দোকানের আলো আর সাইনবোর্ডই ভরসা। সিলেট নগরের লামাবাজার-শেখঘাট সড়কের একাংশ। গত সোমবার রাত পৌনে ১১টায়
ছবি: প্রথম আলো

শেখঘাটগামী মূল সড়কটি অন্ধকারাচ্ছন্ন। একটি সড়কবাতিও জ্বলছে না। একটি-দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা আর মোটরসাইকেল যাওয়া-আসা করছে। যানবাহনের আলোয় চলছে পথচারীরা। দু-একজন হাতে মোবাইলের আলো জ্বেলে হাঁটছে। এটি ৩ আগস্ট রাত ১১টায় সিলেট নগরের ব্যস্ততম লামাবাজার এলাকার চিত্র।

শুধু লামাবাজার-শেখঘাট সড়ক নয়, নগরের ১৮টি এলাকার ৪২টি পাড়া-মহল্লায় সড়কবাতি জ্বলে না। স্থানীয় লোকজন বলেন, সড়কবাতি না থাকার তালিকায় বাণিজ্যিক এলাকা থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লা রয়েছে। ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে।

২ ও ৩ আগস্ট সরেজমিনে দেখা গেছে, কিছু এলাকায় সড়কবাতি থাকলেও কয়েকটি খুঁটি পরপর বাতি অকেজো। লোকজন বলেন, আশপাশে থাকা দোকানপাটের বাতি ও সাইনবোর্ডের আলো সড়কে পড়ে। তাঁরা সে আলোর ওপর ভরসা করে যাতায়াত করেন।

শহরের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা কালীঘাট (একাংশ) ও ডাকবাংলো রোডে সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর ঘুটঘুটে অন্ধকার পরিবেশ তৈরি হয়। এ রকম অবস্থা দেখা গেছে বারুতখানা, হাওয়াপাড়া, ধোপাদীঘির পাড়, কাজীরবাজার, ডহর, কানিশাইল, শামীমাবাদ, নরসিংটিলা, সাগরদীঘির পাড়, উপশহর, খরাদিপাড়া, পুরোনো রেলস্টেশন, পশ্চিম পাঠানটুলা, কালীবাড়ি, করেরপাড়া ও পনিটুলা এলাকায়।

খরাদিপাড়া এলাকার বাসিন্দা নজিবুর আহমেদ বলেন, চলমান বিধিনিষেধের কারণে সন্ধ্যার আগে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় ফলে সন্ধ্যার পর চারপাশ নীরব থাকে। এ অবস্থায় খরাদিপাড়ার মূল সড়কের একাংশ সড়কবাতির অভাবে অন্ধকার থাকে। রাতে বাইরে যেতে হলে আতঙ্কে থাকতে হয়।

৩ আগস্ট রাতে পশ্চিম পাঠানটুলা থেকে করেরপাড়া যাওয়ার সড়কটিতে কোনো সড়কবাতি জ্বলতে দেখা যায়নি। স্থানীয় লোকজন বলেন, সন্ধ্যার পর এখানে প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। অথচ এ সড়কের পাশে একটি বেসরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। নগরের করেরপাড়া, কালীবাড়ি, হাওলাদারপাড়া, তারাপুর, পনিটুলা, পশ্চিম পাঠানটুলাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করেন। অন্যদিকে কানিশাইল ও শামীমাবাদ এলাকার মূল সড়কগুলোতে সড়কবাতি থাকলেও অন্তত সাতটি পাড়া-মহল্লার গলিতে সড়কবাতি নেই।

ভুক্তভোগী একাধিক বাসিন্দা বলেন, অন্ধকারে ছিনতাইয়ের শঙ্কায় ভুগতে হয়। এ ছাড়া হাঁটার সময় একটু অসাবধান হলে হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটছে। কিছু কিছু স্থান অন্ধকার থাকায় মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের আনাগোনা বেড়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ শাখা জানিয়েছে, নগরের ২৭টি ওয়ার্ডে সড়কবাতির চাহিদা আছে ৩৫ হাজার। এর বিপরীতে বাতি আছে ২৫ হাজার। এর মধ্যে গড়ে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ অকেজো সড়কবাতি বদলাতে হয়। নগরের সড়কগুলোতে যেসব বাতি আছে এর মধ্যে রয়েছে ২৫০টি সোডিয়াম ও প্রায় ৬ হাজার এলইডি বাতি আর বাকিগুলো টিউবলাইট। ৪৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলমান। আগামী তিন বছর এ প্রকল্পের আওতায় সড়কবাতি লাগানো হবে। প্রথম পর্যায়ে তিন হাজার বাতি লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে।

সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) মো. রুহুল আলম বলেন, যেসব এলাকা ও পাড়া-মহল্লায় সড়কবাতি নেই, সেখানে পর্যায়ক্রমে সড়কবাতি লাগানো হচ্ছে। অনেক স্থানে সড়কবাতি থাকলেও তা অকেজো। তবে নিয়মিত বাতি বদলানো হচ্ছে। তিন বছর মেয়াদি একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।