সড়কে খানাখন্দ, পর্যটক ও স্থানীয়দের দুর্ভোগ

পর্যটন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে সড়কগুলো সংস্কারের জন্য প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানান স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের সড়ক খানাখন্দে ভরা। শ্রীমঙ্গল শহরের চৌমুহনা-সংলগ্ন স্টেশন সড়ক এলাকায় গতকাল মঙ্গলবারছবি: প্রথম আলো

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো দীর্ঘদিন ধরে খানাখন্দে ভরা। এর ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। শহরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেহাল সড়কগুলোর জন্য পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসা লোকসানের মুখে পড়েছে। তাঁরা শিগগিরই এসব সড়ক মেরামতের দাবি জানান।

আবাসন সেবা সংস্থার উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক বলেন, শ্রীমঙ্গল পর্যটন নগরী। কিন্তু এখানকার ভাঙাচোরা সড়কের কারণে বেশি টাকা ভাড়া দিয়ে যানবাহনে চলাচল করতে হয় পর্যটকদের। হোটেল-রিসোর্টমালিকেরাও সমস্যায় পড়েন। শ্রীমঙ্গলের পর্যটন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে এখানকার সড়কগুলো সংস্কারের জন্য তিনি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানান।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌমুহনা চত্বর থেকে শুরু হওয়া স্টেশন সড়ক বেহাল। চৌমুহনা থেকে বধ্যভূমি একাত্তরের একটু সামনে পর্যন্ত জায়গায় জায়গায় খানাখন্দ। শীতকালেও ধুলার আস্তরণ। সিলেট থেকে আসা দুজন পর্যটক বলেন, তাঁরা রিকশা ও ইজিবাইক দিয়ে ঘুরছেন। মূল শহর কিংবা এর বাইরের সড়কের অবস্থা ভালো নয়। গাড়ির চাকা কিছুক্ষণ পর পর গর্তে পড়ে যায়। চালকেরা খারাপ রাস্তার কথা বলে ভাড়াও বেশি চান। আর যেখানে গাড়ি বেশি, সেখানে চারদিকে ধুলা।

পৌরসভার মেয়র মহসিন মিয়া বলেন, চৌমুহনা থেকে স্টেশন সড়ক হয়ে ভানুগাছ সড়কটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের। সেখানে পৌরসভার কাজ করার সুযোগ নেই।

মৌলভীবাজার সওজের শ্রীমঙ্গল উপশাখার সহকারী প্রকৌশলী আরিফ হোসাইন বলেন, সড়কটি মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। পুরো সড়কটি আরসিসি ঢালাই করা হবে। এরই মধ্যে ভানুগাছ সড়কের বধ্যভূমি-সংলগ্ন রাস্তার পাশের বিদ্যুতের লাইন, গাছের ডাল ইত্যাদি সরিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, শহরের পরে পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ উপজেলার রাধানগর এলাকা। এখানে প্রায় ৩৫টি ছোট-বড় হোটেল ও রিসোর্ট আছে। গ্র্যান্ড সুলতান টি–রিসোর্টের সামনে থেকে মহাজিরাবাদ পর্যন্ত পুরো সড়ক ভাঙাচোরা। সড়কটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতাধীন। রামনগর মণিপুরিপাড়াও পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়। মণিপুরিদের তাঁতের কাপড় কিনতে ও ১০ রঙা চা খেতে পর্যটকেরা এখানে আসেন। কালীঘাট সেতুর সামনে থেকে মণিপুরিপাড়া পর্যন্ত সড়ক খানাখন্দে ভরা। এ ছাড়া শহরের ভানুগাছ সড়ক, স্টেশন সড়ক, সাতগাঁও কালীবাড়ি সড়ক, সিন্দুরখান সড়কও বেহাল। এসব সড়ক এলজিইডির আওতাধীন।

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক শাহজাহান মিয়া বলেন, ‘আমি প্রায়ই পর্যটক নিয়ে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে যাই। শ্রীমঙ্গল শহরের চৌমুহনা থেকে ভানুগাছ সড়ক হয়ে যেতে হয়। চৌমুহনার পাশের রাস্তা খানাখন্দে ভরা। তা ছাড়া রাধানগর ও রামনগরের রাস্তা খুবই খারাপ। পর্যটকেরা বেশ বিরক্ত হয়। আমাদের যানবাহনেরও অনেক সমস্যা হয়।’

উপজেলা প্রকৌশলী মো. ইউসুফ হোসেন খান বলেন, রাধানগরের সড়কের কাজ করার জন্য তাঁরা অনুমতি চেয়ে গত বছর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন। সেখান থেকে বরাদ্দ এলে কাজ শুরু হবে।

রামনগর মণিপুরিপাড়ার গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্টের মালিক সেলিম আহমেদ বলেন, তাঁরা হোটেল-রিসোর্ট মালিকেরা ভ্যাট-ট্যাক্স সব দিচ্ছেন। কিন্তু এলাকার রাস্তাঘাট মেরামত না করার কারণে পর্যটকেরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। একটা পর্যটন নগরীর জন্য রাস্তাঘাট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই রাস্তাঘাটের ওপর নির্ভর করে যানবাহনের চালকেরা বাড়তি ভাড়া আদায় করেন। এ রকম ভাঙা রাস্তাঘাটের কারণে অনেক সময় পর্যটকেরা সব জায়গায় যেতে চান না। তাঁরা চান এসব রাস্তাঘাট ঠিক করা হোক। এতে পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ভাঙাচোরা সড়কগুলো চিহ্নিত করে কাজ শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ভানুগাছ-শ্রীমঙ্গল সড়কে কাজ শুরু হয়েছে। রাধানগর থেকে জেরিন যাওয়ার সড়কটির কাজও হাতে নিয়েছে প্রশাসন।