সড়কে জমে থাকে হাঁটুপানি, সীমাহীন দুর্ভোগ

নলছিটি পৌরসভার সড়কগুলোর বেহাল দশার চিত্র এটি। সড়কজুড়ে খানাখন্দ। পৌর শহরের প্রধান সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। সম্প্রতি তোলা।
প্রথম আলো

ঝালকাঠি নলছিটি পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর অবস্থা খুব খারাপ। শহরের ব্যস্ততম বাসস্ট্যান্ড সড়ক-পোস্ট অফিস সড়ক থেকে গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ সড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার অংশ গত সাড়ে চার বছরেও সংস্কার হয়নি। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই খানাখন্দে ভরা এ সড়কগুলো যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।

শহরের দুই কিলোমিটারের পাকা নালা প্রধান সড়ক থেকে প্রায় এক ফুট উঁচু। এর ফলে বর্ষার পানি নামে ধীরগতিতে। এতে ভাঙাচোরা সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে মানুষের চলাচলে ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দেয়। এক পাশে আড়াই ফুট উঁচু নালার সঙ্গে চৌদ্দ ফুটের সরু সড়কে সব সময় যানজট ও মানুষের গাদাগাদি লেগেই থাকে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, পয়োনিষ্কাশনের অভাবে নলছিটি পৌরসভার ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ সড়ক, পুরোনো পোস্ট অফিস সড়ক ও পুরোনো বাজার সড়ক এলাকার প্রায় ১০০ পরিবার বর্ষা মৌসুমে পানিবন্দী থাকেন। কাঁচা সড়ক দিয়ে বছরের পর বছর চলাচল করছেন বৈচণ্ডী, মালিপুর, সারদল, গড়িপাশা, নন্দিকাঠি ও সূর্যপাশা এলাকার বাসিন্দারা। ইতিমধ্যেই নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের খোঁজখালী এলাকা। মল্লিকপুর এলাকাও সুগন্ধা নদীর করাল গ্রাসে বিলীন হওয়ার পথে। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ নির্বিকার।

সড়কের খানাখন্দের মধ্যে রিকশা-ভ্যান পড়লে ওঠাতে কষ্ট হয়। সড়কের গর্তগুলোতে রিকশা পড়ে চাকার রিং বাঁকা হয়ে যায়। কয়েক দিন পর পর রিকশা ঠিক করতে হয়।
জামাল হোসেন, নলছিটি বাসস্ট্যান্ড সড়কের রিকশাচালক

নলছিটি পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, দেশের প্রাচীন পৌরসভাগুলোর মধ্যে নলছিটি অন্যতম। পৌরসভাটি ঢাকার পরেই ১৮৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ১০০ বছর পরে ১৯৬৫ সালে পৌরসভাটি আবার বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৯৮৫ সালে আবার পৌরসভার মর্যাদা ফিরে পায় নলছিটি। ১৯৯৯ সালে এটি ‘খ’ শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। ২৪ দশমিক ১৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই পৌরসভার লোকসংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৭০ হাজার। পৌরসভায় পাকা সড়ক আছে ৪০ কিলোমিটার এবং কাঁচা সড়ক আছে ৬০ কিলোমিটার। পাকা নালা আছে ২ কিলোমিটার আর কাঁচা নালা আছে ১০ কিলোমিটার। গত সাড়ে চার বছরে পৌর শহরের সড়কগুলো নতুন করে সংস্কার হয়নি।

সড়কের খানাখন্দে জলাবদ্ধতা হয়ে জনভোগান্তি চরমে উঠেছে। সম্প্রতি নলছিটি পৌর শহরের ব্যস্ততম পোষ্ট অফিস সড়কে।
প্রথম আলো

সরেজমিনে সম্প্রতি নলছিটি পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড, পোস্ট অফিস, গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পুরোনো বাজার, বৈচণ্ডী, মালিপুর, সারদল, গড়িপাশা, নন্দিকাঠি ও সূর্যপাশা এলাকার সড়কে কার্পেটিং উঠে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। গত এক সপ্তাহের টানা বর্ষণে সড়কে তৈরি হওয়া গর্তে পানি জমে আছে। ফলে যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়ে। এতে প্রায়ই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। নালা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ সড়ক ও পুরোনো পোস্ট অফিস সড়কে জমে থাকছে হাঁটুপানি।

নলছিটি বাসস্ট্যান্ড সড়কের রিকশাচালক জামাল হোসেন বলেন, ‘সড়কের খানাখন্দের মধ্যে রিকশা-ভ্যান পরলে ওঠাতে কষ্ট হয়। সড়কের গর্তগুলোতে রিকশা পরে চাকার রিং বাঁকা হয়ে যায়। কয়েক দিন পর পর রিকশা ঠিক করতে হয়। সড়ক খারাপ থাকায় আমাদেরও চালাতে কষ্ট হয়। আর যাত্রীদের তো ভোগান্তির শেষ নেই।’

গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ সড়ক এলাকার বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে। এ এলাকায় নালার অভাবে পানি নিষ্কাশন হয় না। আর আমাদের পাকা সড়ক বলতে কিছু নেই।’

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার দুলাল চৌধুরী বলেন, পৌর শহরের প্রধান সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। বর্ষায় পথচারীদের খুব কষ্ট হয়। তাই দ্রুত এ সড়কগুলোর সংস্কার করা জরুরি।

নলছিটি পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী আবদুল আজিজ বলেন, বাসস্ট্যান্ড সড়কের মালিকানা সড়ক বিভাগের। তাঁরা সংস্কার না করায় বাসস্ট্যান্ডসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের আধা কিলোমিটার অংশের দ্রুত কাজ করা হবে।

নলছিটির মেয়র তসলিম চৌধুরী বলেন, পৌর শহরের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও নালা পুনর্নির্মাণের জন্য প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এ প্রকল্পের গতি থমকে আছে। তবে সড়কের ভাঙাচোরা অংশ শিগগিরই সংস্কার করা হবে।