সড়কের ওপরে বসে হাটবাজার

এসব হাটের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ। তবে সওজ বলছে, অবৈধভাবে গড়ে ওঠা হাটবাজারের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকার কাজ চূড়ান্ত হলে অবৈধ হাটবাজার উচ্ছেদ করা হবে।

গাইবান্ধা-দারিয়াপুর-সুন্দরগঞ্জ সড়কের পাশে গড়ে উঠেছে পশুরহাট। গাইবান্ধা সদর উপজেলার দারিয়াপুরে।ছবি: প্রথম আলো

গাইবান্ধায় একটি মহাসড়ক ও ছয়টি আঞ্চলিক সড়কের ওপর ২৪টি হাটবাজার গড়ে উঠেছে। বেশির ভাগ হাটবাজারে গতিরোধক কিংবা নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেই। এতে শঙ্কিত সবাই।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও এসব হাটের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না বলে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ। তবে সওজ বলছে, মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের ওপর অবৈধভাবে গড়ে ওঠা হাটবাজারের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকার কাজ চূড়ান্ত হলে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অবৈধ হাটবাজার উচ্ছেদ করা হবে।

গাইবান্ধা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আওতাধীন ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে ফাঁসিতলা, গোলাপবাগ হাট, বালুয়াবাজার, কোমরপুর, পলাশবাড়ী, ধাপেরহাট বাজার; গাইবান্ধা-পলাশবাড়ি সড়কে তুলসীঘাট বাজার, মাঠেরহাট, ঢোলভাঙ্গা বাজার; গাইবান্ধা-সাদুল্যাপুর সড়কে সাহারবাজার; গাইবান্ধা-নাকাইহাট সড়কে নকাইহাট বাজার; গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়কে ত্রিমোহিনী বাজার, বাদিয়াখালী হাট, কুকরারহাট, ভরতখালীর হাট, উল্যাবাজার, কচুয়া হাট; গাইবান্ধা-দারিয়াপুর-সুন্দরগঞ্জ সড়কে দারিয়াপুরহাট, মজুমদার হাট, শোভাগঞ্জ হাট, মাটেরহাট, ডোমের হাট এবং গাইবান্ধা এলজিইডির আওতাধীন গাইবান্ধা-কূপতলা-সুন্দরগঞ্জ সড়কে কূপতলা ও লক্ষ্মীপুর হাট গড়ে উঠেছে।

কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের ওপর পণ্য বেচাকেনা চলে। ঢাকা-রংপুর জাতীয় সড়ক ঘেঁষে গোবিন্দগঞ্জ সদরে গড়ে ওঠা গোলাপবাগ হাট বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। গোলাপবাগ এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী আজিজার রহমান বলেন, সপ্তাহের যে দুদিন হাট বসে, তাঁরা সেই দুদিন আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। কারণ মহাসড়কে এমনিতেই যানবাহনের চাপ। উপরন্তু হাটের দিন মহাসড়কের ওপর বিভিন্ন পণ্য বেচাকেনা চলে। তাই হাটে আসা লোকজন যানবাহনের ধাক্কায় প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।
গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মতিন মোল্লা বলেন, উপজেলার অন্তর্গত মহাসড়কে চারটি হাট বসে। অথচ কোনো হাটেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেই। বিষয়টি সওজ বিভাগকে বারবার জানিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।

হাটের নির্ধারিত জায়গা থাকতেও কিছু ব্যবসায়ী মহাসড়কের ওপর চেয়ার-টেবিল, বিভিন্ন আসবাব, হাঁস-মুরগি বেচাকেনা করেন। হাটে আসা বয়স্ক লোকজন সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।
আহম্মদ উল্যাহ, কলেজছাত্র, গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা

উপজেলার বালুয়াবাজার এলাকার কলেজছাত্র আহম্মদ উল্যাহ বলেন, হাটের নির্ধারিত জায়গা থাকতেও কিছু ব্যবসায়ী মহাসড়কের ওপর চেয়ার-টেবিল, বিভিন্ন আসবাব, হাঁস-মুরগি বেচাকেনা করেন। হাটে আসা বয়স্ক লোকজন সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন।
সাদুল্লাপুরের ধাপেরহাট গ্রামের সোলায়মান হোসেন বলেন, ঢাকা-রংপুর মহাসড়কটি ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের আট জেলার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। এ কারণে মহাসড়কে সব সময় যানবাহনের চাপ থাকে। এ ধরনের একটি ব্যস্ততম মহাসড়কে হাটবাজারের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনা রোধে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।
ধাপেরহাট গ্রামের বাসচালক বাবলু মিয়া বলেন, মহাসড়কের দু-একটি হাটের সামনে ‘সাবধান! সামনে বাজার’ লেখা সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব সাইনবোর্ড এত ছোট যে বাস চালানোর সময় চোখে পড়ে না। তাই হাটবাজার এলাকায় ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চালাতে হয়। সাবধান থেকেও লোকজনকে বাঁচাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।

আঞ্চলিক সড়কগুলোরও একই অবস্থা। পলাশবাড়ী উপজেলার মাঠেরহাটে সপ্তাহে দুদিন সড়কের ওপর গরু-ছাগল বেচাকেনা হয়। মাঠেরহাট গ্রামের স্কুলশিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা মাঠেরহাটের উত্তর পাশে গরু-ছাগল বেচাকেনা হয়, দক্ষিণ পাশে সাইকেল-রিকশা স্ট্যান্ড। এর ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। বিষয়গুলো প্রশাসনকে বারবার জানানো হচ্ছে। অথচ তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

এ বিষয়ে গাইবান্ধা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সড়ক থেকে অবৈধ হাটবাজার উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তার পরও সওজের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের ওপর অবৈধভাবে গড়ে ওঠা হাটবাজারের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকার কাজ চূড়ান্ত হলে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অবৈধ হাটবাজার উচ্ছেদ করা হবে।

সড়কের ওপর থেকে এসব হাটবাজার উচ্ছেদের জন্য প্রশাসনকে বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীবও।
জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন বলেন, হাটগুলো দীর্ঘদিন থেকে সড়কের পাশে বসছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।