হত্যা মামলার তিন আসামি মাঠে

২৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ড

২৫ নম্বর ওয়ার্ডের চৌয়ারা এলাকার বাসিন্দা যুবলীগ নেতা জিল্লুর রহমান চৌধুরীকে (৫৫) ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের চৌয়ারার বাসিন্দা যুবলীগ নেতা জিল্লুর রহমান চৌধুরী ওরফে জিলানীকে (৫৫) ২০২০ সালের ১১ নভেম্বর কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যা মামলার ৪ নম্বর আসামি সদর দক্ষিণ উপজেলা যুবদলের সভাপতি মো. খলিলুর রহমান মজুমদার এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন।

একই হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মো. আবদুস সত্তার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে এবং ১ নম্বর আসামি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসান ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন।

আবুল হাসান ও খলিলুর রহমান আপন খালাতো ভাই। সত্তার তাঁদের ঘনিষ্ঠজন। তিনজনই এ মামলায় কারাগারে ছিলেন। তিনজনই জামিনে এসে নির্বাচন করছেন। তিনজনই সাবেক কাউন্সিলর।

এদিকে ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর রাতে বল্লভপুরে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনকে (৪৫) গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই মামলারও আসামি সদ্য বিদায়ী কাউন্সিলর ও কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুস সত্তার।

এই তিন ওয়ার্ডের অন্যতম সমস্যা আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, চৌয়ারা বাজার ও গরুর বাজার নিয়ন্ত্রণ, মাদক ব্যবসা। এর বাইরে জলাবদ্ধতা, নালার সমস্যা, রয়েছে ভাঙাচোরা সড়কও। ভোটারদের দাবি, যিনি হানাহানিমুক্ত এলাকা গড়ে তুলতে পারবেন, তাঁকেই আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠেয় কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট দেবেন তাঁরা।

২০১৭ সালের ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিল্লুর রহমান চৌধুরী ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দেলোয়ার হোসেন কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করে পরাজিত হন। এবার যাতে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, সে জন্য তাঁদের হত্যা করা হয় বলে এলাকাবাসীর ধারণা।

২৫ নম্বর ওয়ার্ড

লক্ষ্মীপুর, লইপুরা, দয়াপুর, চৌয়ারা ও তারাপাইয়া এলাকা নিয়ে এ ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডের দয়াপুর-ডুমুরিয়া সড়কে শত শত গর্ত। তারাপাইয়ার এক কিলোমিটার সড়কেও গর্ত আছে। ঢাকা-চট্রগ্রাম সড়কের কাছে এ ওয়ার্ডের পানি দক্ষিণ দিকে নামতে পারছে না। ওয়ার্ডের দক্ষিণ প্রান্তে মল্লিকা সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে আন্ডারপাস নেই। এখানে প্রায়ই দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটে। রয়েছে মাদক ও অবকাঠামোগত সমস্যাও।

এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মো. এমদাদুউল্লাহ, খলিলুর রহমান মজুমদার, মো. জহিরুল ইসলাম, আবদুল খালেক, মো. অহিদুর রহমান ও মো. রফিকুল ইসলাম—এ ছয়জন নির্বাচন করছেন। এ ওয়ার্ডে ভোটার ৩ হাজার ৮৫৯ জন। কাউন্সিলর প্রার্থী খলিলুর বলেন, ‘জিল্লুর হত্যার সঙ্গে আমাকে কোনো কারণ ছাড়াই আসামি করা হয়। ভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা হওয়ায় এ মামলায় কারাবরণ করতে হয়।’

২৬ নম্বর ওয়ার্ড

বল্লভপুর, গোয়ালমথন, শামবকসী এলাকা নিয়ে এ ওয়ার্ড। এখানে নালার সমস্যা আছে। এখানে গলির বিভিন্ন সড়কের অবস্থাও ভাঙাচোরা। মাদকের কারবার আছে। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর ছাত্রলীগের জনপ্রিয় নেতা দেলোয়ার হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। প্রকাশ্যে এ ওয়ার্ডের কেউ কিছু বলতে রাজি নন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, ‘চাঁদাবাজি, মাদক ঠেকালে এলাকা উন্নত হবে। আমরা খুনোখুনি চাই না।’

এখানে মো. আবদুস সত্তার, মো. কামাল হোসেন, মো. গোলাম সরোয়ার কাউসার, মো. জহিরুল ইসলাম ও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন। এখানে ভোটার ৫ হাজার ২৪৭ জন।

আবদুস সত্তার বলেন, ‘দেলু ভাই (দেলোয়ার হোসেন) আমার রাজনৈতিক গুরু। জিল্লুর ভাইয়ের (জিল্লুর রহমান চৌধুরী) সঙ্গে আমার কোনো শক্রতা নেই। এরপরও আওয়ামী লীগের একটি অংশের লোকজন আমাকে এ দুই হত্যাকাণ্ডে জড়ান।’

২৭ নম্বর ওয়ার্ড

রায়পুর, পাঠানকোট, দক্ষিণ ধনাইতরি, মাটিয়ারা, নোয়াগ্রামসহ কয়েকটি এলাকা নিয়ে এ ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডে চৌয়ারা আদর্শ ডিগ্রি কলেজ, চৌয়ারা দাখিল মাদ্রাসা, চৌয়ারা মাধ্যমিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চৌয়ারা বাজার, দিঘি, মসজিদ ও গরু বাজারও এ ওয়ার্ডেই। এখানে চাঁদাবাজি আছে, আধিপত্য আছে, নালা কম, সড়কও ভাঙাচোরা।

চৌয়ারা বাজারের অন্তত পাঁচজন ব্যবসায়ী বলেন, চৌয়ারা বাজার, মসজিদকে ঘিরে কিছু সমস্যা আছে। এগুলোর সমাধান চান এলাকাবাসী।

এক ব্যবসায়ী জানান, নীরব চাঁদাবাজিও আছে।

এখানে মো. আবুল হাসান, মো. সাইফুল হক চৌধুরী, মো. মকবুল আহাম্মেদ, মোহাম্মদ ওসমান গণি, হোছাইন মোশারফ ও জামালউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছেন। এখানে ভোটার ৭ হাজার ৩৩৩ জন।

আবুল হাসান বলেন, ‘জিল্লুর হত্যা মামলায় আমাকে ফাঁসানো হয়। রাজনৈতিক মতবিরোধ ও বিভেদ থেকে এসব হত্যা। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’