হত্যা মামলায় ৮৫ দিন জেল খেটেও বিদ্যালয়ে নিয়মিত

প্রতীকী ছবি

হত্যা মামলার ৩ নম্বর আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হয়ে ৮৫ দিন জেল খেটেছেন। হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দাখিল করেছে। নিয়ম অনুযায়ী তাঁকে বরখাস্ত করার কথা থাকলেও জামিনে বের হয়ে তিনি বিদ্যালয়ে নিয়মিত হয়েছেন। আর জেলে থাকার সময়ে তিনি ছুটি হিসেবে কাটিয়েছেন। এই ব্যক্তির নাম সুজন আল হাসান (৩৯)। তিনি রাজশাহীর সরকারি পিএন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মালি হিসেবে কর্মরত।

সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী কেউ গ্রেপ্তার হলে তিনি সেই দিন থেকে সাময়িক বরখাস্ত হিসেবে বিবেচিত হবেন। কিন্তু দীর্ঘ ১৪ মাসেও তাঁকে সাময়িক বরখাস্তের জন্য সুপারিশ করেনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তিনি নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন, বেতনও তুলছেন।

বিদ্যালয় ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই রাজশাহী নগরের ভুগরইল পশ্চিমপাড়া এলাকায় মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে ঘটনার তিন দিন পর ওই এলাকার আবদুল হান্নানের ছেলে সেলিম রেজা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই দিন ২১ জনকে আসামি করে শাহমখদুম থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা। এ মামলায় সুজন ৩ নম্বর আসামি।

পরে ২২ অক্টোবর মামলায় অন্য আসামিদের সঙ্গে আদালতে হাজিরা দিতে গেলে সুজনসহ অন্যদের আদালত জেলহাজতে পাঠান। দীর্ঘ ৮৫ দিন কারাগারে কাটিয়ে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি জামিনে বেরিয়ে বিদ্যালয়ে নিয়মিত হয়েছেন তিনি। এ মামলায় সুজনের সংশ্লিষ্টতাসহ চলতি বছরের ৯ এপ্রিল মামলার ২১ আসামিকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ।

জানতে চাইলে সুজন আল হাসান দাবি করেন, হত্যাকাণ্ডের দিন বিদ্যালয়ে পঞ্চদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। ঘটনার দিন কেবল জুমার নামাজের জন্য বেরিয়েছিলেন। ওই হত্যাকাণ্ডে তিনি জড়িত নন। তাঁকে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। জামিনে বেরিয়ে আসার পর থেকে বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসছেন বলে জানিয়েছেন।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গত বছরের ৪ আগস্ট একটি প্রত্যয়নপত্রও দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছে, গত বছরের ২৬ ও ২৭ জুলাই বিদ্যালয়ে পঞ্চদশ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা ছিল। এদিন সুজন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। এদিকে সুজন কারাগারে থাকাকালে ওই ৮৫ দিনের ছুটি দেখিয়েছেন। কিন্তু ছুটি নিয়েছেন কি না, সে বিষয়ে সুজন বলেন, ছুটির বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে জিজ্ঞাসা করেন। সাময়িক বরখাস্তের বিষয়েও তিনি একই কথা বলেন।

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌহিদ আরা বলেন, সুজন যে একটি হত্যা মামলার আসামি, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানতেন না। এমনকি আদালত থেকেও তাঁকে জানানো হয়নি। জেলে থাকার বিষয়টিও গোপন করেছেন সুজন। প্রত্যয়নপত্রও নিয়েছেন একইভাবে। তাঁর স্ত্রীর মাধ্যমে সুজন অসুস্থতা দেখিয়ে দুই দফা ছুটির জন্য দরখাস্ত করেন। তাঁকে ধোঁকা দিয়ে এই কাজগুলো সুজন করেছেন।

প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, তিনি এ ঘটনা জানার পর গত ২৭ সেপ্টেম্বর সুজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। সুজন তার জবাবে তাঁকে বলেছেন, তিনি আইনি বিষয়গুলো বুঝতে না পেরে এটা করেছেন। পরে এ–সংক্রান্ত কাগজপত্র গুছিয়ে তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) রাজশাহীর উপপরিচালক ও ঢাকায় মাউশি অফিসে পাঠিয়েছেন। আশা করা যায়, সুজন দ্রুত বরখাস্ত হয়ে যাবেন।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ের উপপরিচালক শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী বলেন, সুজনকে শোকজের বিষয়ে তিনি কিছু কাগজপত্র পেয়েছেন চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে। রোববার সকালে পিএন স্কুল থেকে একটি চিঠিও পেয়েছেন। তবে সেই চিঠি এখনো তাঁর দেখা হয়নি। এগুলো দেখে তিনি বলতে পারবেন।