হত্যাকাণ্ড কি না, খতিয়ে দেখার আহ্বান রানা দাশগুপ্তের

কক্সবাজারের মালুমঘাটে দুর্ঘটনায় নিহত ছয় ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে বক্তব্য দেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত
ছবি: সৌরভ দাশ

পিকআপের ধাক্কায় একসঙ্গে মারা যাওয়া ছয় ভাইয়ের পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে আজ বুধবার অনেক সংগঠন ও ব্যক্তি সকাল থেকে উপস্থিত হন মালুমঘাটে। অনেক সাহায্য-সহযোগিতা ও আশ্বাস পেয়েছেন সন্তান ও স্বামীহারা আট নারী। দুর্ঘটনার পর থেকে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কিছু কিছু ব্যক্তি উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে দুর্ঘটনার ১৬ দিনের মাথায় আজ বুধবার প্রথম কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ মালুমঘাটে যান।

এর আগে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত মালুমঘাটে পৌঁছান বেলা একটার দিকে। তিনি অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর জন্য সবাইকে আহ্বান জানান। পাশাপাশি ঘটনাটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত, তা খতিয়ে দেখার জন্য তদন্তকারী সংস্থাকে অনুরোধ জানান রানা দাশগুপ্ত।

এ সময় হ্যান্ড মাইকে রানা দাশগুপ্ত বলেন, আহত এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, পিকআপটি একবার মেরে দেওয়ার পর পেছনে গিয়ে পুনরায় আহত ব্যক্তিদের চাপা দিয়েছে। এটা যদি হয়, তাহলে ওই চালক এটা কি ইচ্ছাকৃতভাবে পেছনে দিয়েছেন, নাকি অন্য কোনো কারণে পেছনে দিয়েছেন, তা বের করার দায়িত্ব পুলিশের। যদি পরিকল্পিত হয়, তাহলে মামলার ধারায় পরিবর্তন আসবে। কারণ, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সর্বোচ্চ শাস্তি ছয় বছরের কারাদণ্ড, পরিকল্পিত দুর্ঘটনার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।

রানা দাশগুপ্ত ও পরিষদের নেতা পরিমল চৌধুরী হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে অনুদানের অর্থ পরিবারটির মৃণালিনী সুশীল (মানু) ও তাঁর পুত্রবধূদের হাতে তুলে দেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম জেলা সৎসঙ্গের সভাপতি সজীব সিংহ, ইসকনের সম্পাদক চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারীসহ আগত অনেকে তাঁদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির সদস্যদের হাতে আজ সহায়তাসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়
ছবি: সৌরভ দাশ

জেলা প্রশাসক বেলা দেড়টার দিকে ওই বাড়িতে পৌঁছান। তিনি পিকআপের ধাক্কায় নিহত পরিবারটিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আটটি পৃথক ঘর করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ ছাড়া অর্থ সাহায্যও করেছেন জেলা প্রশাসক। তিনি বলেন, ডুলাহাজরা নাথপাড়ায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে তাঁদের আটটি ঘর দেওয়া হবে।

এর আগে সকাল থেকে এএসপি মো. তফিকুল আলম, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জে পি দেওয়ান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাহাত উজ জামানসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

৮ ফেব্রুয়ারি চকরিয়ার মালুমঘাট এলাকায় পিকআপের ধাক্কায় সুরেশ সুশীলের ছয় ছেলের মৃত্যু হয়। এর আগে ৩০ জানুয়ারি সুরেশ সুশীল অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

মৃত্যুর দশম দিনে শ্মশান থেকে ফেরার পথে বাড়ির পাশে পিকআপটি তাঁদের ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে ও হাসপাতালে নেওয়ার পথে পাঁচ ভাই মারা যান। আহত হন রক্তিম সুশীল, প্লাবন সুশীল ও বোন হীর সুশীল। রক্তিম গতকাল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। হীরা এখনো হাসপাতালে। এই ঘটনায় চকরিয়া থানায় একটি মামলা হয়েছে। পিকআপের চালক সাইফুল ইসলামকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলাটির তদন্ত করছে পিবিআই।