‘হত্যার বদলে হত্যা’ ঘোষণার পরের দিন শান্তির প্রস্তাব কাদের মির্জার

আবদুল কাদের মির্জা
ফাইল ছবি

ফেসবুক লাইভে ‘হত্যার বদলে হত্যা’ হুমকি দেওয়ার প্রায় ১৫ ঘণ্টা পর নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে শান্তির প্রস্তাব দিলেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা। তিনি বসুরহাট পৌরসভার মেয়র। আজ বুধবার ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে অনুসারী স্বপন মাহমুদের ফেসবুকে লাইভে এসে কাদের মির্জা এ প্রস্তাব দিয়েছেন। লাইভটি কাদের মির্জার ফেসবুকে ট্যাগ করা হয়েছে।

ফেসবুক লাইভে আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘আমাদের প্রিয় কোম্পানীগঞ্জে যাতে আর রক্তপাত না হয়, সংঘাত না হয়, সংঘর্ষ না হয়, অস্ত্রমুক্ত, মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, দখলদারমুক্ত, দুর্নীতিবাজমুক্ত ও মুক্ত আকাশে মানুষ যাতে নিশ্বাস ফেলতে পারে, সে জন্য কিছু প্রস্তাব আমি উপস্থাপন করছি।’ তাঁর প্রস্তাবের মধ্যে আছে—প্রশাসনের নিরপেক্ষতা হারানো কর্মকর্তাদের সরাতে হবে, সাংবাদিক মুজাক্কির (বুরহান উদ্দিন) ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক আলাউদ্দিনের পরিবার যাতে ন্যায়বিচার পায়, ছেলেকে মারধরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, মামলাগুলো সঠিকভাবে তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, নিরপরাধ ব্যক্তিদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া ইত্যাদি।

লাইভে সহাবস্থানের প্রসঙ্গে কাদের মির্জা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বিএনপি-জামায়াত এলাকাছাড়া, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগ এলাকাছাড়া—এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমরা কোম্পানীগঞ্জ থেকে চিরবিদায় দিতে চাই। আমি কোম্পানীগঞ্জে সহাবস্থানের রাজনীতি চালু করার জন্য বিনীত আহ্বান জানাচ্ছি।’ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোম্পানীগঞ্জে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও  নিরপেক্ষ হয়, সব দল যাতে প্রার্থী দিতে পারে, আমি সেই আহ্বান জানাচ্ছি।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই কাদের মির্জা বলেন, ‘আমি দল থেকে ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছি। এই প্রশ্নে আমি আপস করব না। আমার বক্তব্য স্পষ্ট। আমি দলের কোনো পদ-পদবি চাই না। আমি ভবিষ্যতে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না।’ ভাইয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন এখানে আছে, সেটা ওবায়দুল কাদের সাহেবের সংসার। ওনার সংসার উনি কাকে দিয়ে চালাবেন, সেটা তিনি জানেন। আমি বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে আছি। আমি এখান থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রচার করব, আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করব।’

গত সোমবার দুর্বৃত্তদের হামলা-গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর নবী চৌধুরী। কাদের মির্জার অনুসারীদের বিরুদ্ধে ওই হামলার অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনায় ইতিমধ্যে কাদের মির্জার ছয়জন অনুসারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গতকাল মঙ্গলবার গ্রেপ্তার ছয়জন অনুসারীর একজন নাজিম উদ্দিন ওরফে মিকনকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হতে পারে—এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে কাদের মির্জা ফেসবুক লাইভে এসে ‘হত্যার বদলে হত্যার’ হুমকি দিয়েছিলেন। সাড়ে চৌদ্দ ঘণ্টার মাথায় বক্তব্য থেকে সরে এসে শান্তি ও রাজনৈতিক সহাবস্থানের আহ্বানের কারণ কী জানার জন্য আজ দুপুরে কাদের মির্জার মুঠোফোনে ফোন দিলে স্বপন মাহমুদ নামের একজন ফোন ধরেন। তিনি বলেন, মেয়র মহোদয় ঘুমাচ্ছেন।

পরে কাদের মির্জার শান্তির প্রস্তাবের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাদের মির্জা একজন পাগল। তাঁর কোনো কথাই এখন আমরা বিশ্বাস করি না। তিনি সকালে এক কথা, বিকেলে এক কথা বলেন। একসময় আমরা কোম্পানীগঞ্জে শতভাগ দলীয় নেতা-কর্মী তাঁর কথায় চললেও এখন শতভাগ নেতা কর্মী তাঁর বিপক্ষে। তাঁর আসলে চিকিৎসা প্রয়োজন।’