হবিগঞ্জে জন্মের পর অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ

হবিগঞ্জ শহরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নবজাতক বদল করতে গিয়ে এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ।

ওই হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার পূর্ব পাকুরিয়া গ্রামের মো. ওয়াসিম মিয়া গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সুমি আক্তারকে অস্ত্রোপচারের জন্য হবিগঞ্জ শহরের কোর্ট স্টেশন এলাকায় অবস্থিত দ্য জাপান ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে আসেন। রাত ১২টার দিকে সুমি আক্তার এক কন্যাশিশুর জন্ম দেন। রাত দুইটার দিকে এক ছেলেসন্তান এনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুমি আক্তারের কাছে দেয়।

সুমি আক্তার বলেন, চিকিৎসক তাঁকে বলেছেন মেয়েসন্তান হয়েছে, কাজেই এ শিশু তাঁর নয়। নবজাতকের চেহারার ধরন ও মোড়ানো কাপড় দেখে সুমির স্বজনদেরও সন্দেহ হয়। তাঁরাও দাবি করেন, শিশুটি তাঁদের নয়। পরে বিষয়টি সুমির স্বামী ওয়াসিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এর কিছুক্ষণ পর মেয়েশিশুটিকে এনে দেয়। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের বলে, ভুল হয়েছে তাদের (হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ)। একসঙ্গে দুটি অস্ত্রোপচার হওয়ায় এ সমস্যা হয়েছে।

এদিকে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা পর এনে দেওয়া মেয়েশিশুটি কিছুক্ষণের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে। নড়াচড়া না দেখে শঙ্কিত হয়ে পড়েন শিশুটির অভিভাবকেরা। এ সময় তাঁরা শিশুটিকে চিকিৎসক দেখাতে বললে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা দেখাতে পারেনি। এরপর ভোররাতে শিশুটির মৃত্যু হয়।

নবজাতকের বাবা গাড়িচালক মো. ওয়াসিম মিয়া কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, এটি তাঁর প্রথম সন্তান ছিল। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সন্তান বদল করে তাঁদের ক্ষতি করেছে। প্রথমে কার সন্তান এনে দিয়েছে, সেটি তারাই জানে। ওই নবজাতককে নিয়ে প্রশ্ন তুললে পরে তাঁদের মেয়েশিশুটিকে এনে দেয়। অনেক বিলম্বে এনে দেওয়ায় শিশুটিকে বাঁচানো গেল না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তাঁর সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।

তাঁদের সঙ্গে আসা রাহেলা বেগম নামের এক নারী বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেয়ে শিশুটিকে এনে দেওয়ার পর আমরা যখন দেখলাম এ নবজাতকের অবস্থা ভালো নয়। শীতে নিথর হয়ে পড়ছে, তখন আমরা হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিতে চাইলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই সুযোগ দেয়নি। তারা মূল ফটকে তালা দিয়ে রাখে। ভোরে গেট খুলে দিলে ততক্ষণে শিশুটি মারা যায়।

হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় তাঁদের কোনো ভুল ছিল না। শিশুটির মায়ের কথা অনুযায়ী মেয়েশিশুটিই তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ফটক বন্ধ করে রাখার কথা অস্বীকার করেন তিনি।

হবিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী বলেন, এ ব্যাপারে নবজাতকের অভিভাবকেরা পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। তবে পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখবে।