হাঁস পালন করে সচ্ছলতা

হাঁস পালন অপেক্ষাকৃত কম পুঁজিতে বেশি লাভজনক। বিল-জলাশয় ও নদীর উন্মুক্ত পানি থাকায় সেখানে হাঁস পালন বাণিজ্যিক রূপ লাভ করেছে।

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নন্দকুঁজা নদীতে পালন করা হচ্ছে হাঁস। হাঁস পালনে খরচ কম, লাভ বেশি। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

চলনবিল–অধ্যুষিত পিঁপলা গ্রামের বাসিন্দা সোহাগ আলী। দিনমজুরি করে চালাতেন পাঁচজনের সংসার। ঋণের চাপে দিশা পাচ্ছিলেন না তিনি। সেই অবস্থায় দুই বছর আগে প্রতিবেশীর কাছ থেকে ধার করা টাকায় শুরু করেন হাঁস লালন–পালন। সেই হাঁসে ভর করে তাঁর সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। বছরজুড়ে হাঁস পালন করেন সোহাগ। এখন তাঁর খামারে ক্যামবেল ও জিংডিং জাতের ৫৮২টি হাঁস রয়েছে। ডিম দিচ্ছে ৪৮০টি হাঁস। বছরে খরচ বাদে লাভ হচ্ছে তিন-চার লাখ।

নাটোরের গুরুদাসপুরে চলনবিল এলাকায় সোহাগের মতো হাঁসের খামারির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। খামারিরা বলছেন, হাঁস পালন অপেক্ষাকৃত কম পুঁজিতে বেশি লাভজনক। বিল-জলাশয় ও নদীর উন্মুক্ত পানি থাকায় সেখানে হাঁস পালন বাণিজ্যিক রূপ লাভ করেছে। পাশাপাশি ডিম মিলছে ভালো।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে, গুরুদাসপুর উপজেলায় ছোট–বড় মিলে ২০০টি হাঁসের খামার রয়েছে। ক্যামবেল, ইন্ডিয়ান রানার ও চায়না জাতের ১০ লাখের বেশি হাঁস পালন করা হচ্ছে এসব খামারে। তবে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ও বেশি ডিম দেওয়ার কারণে ক্যামবেল জাতের হাঁস বেশি পালন করা হচ্ছে। বর্ষায় চলনবিল ও শুকনো মৌসুমে উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নন্দকুঁজা, আত্রাই ও গুমানী নদ–নদীতে এসব হাঁস পালন করে থাকেন খামারিরা।

হরদমা গ্রামের বাসিন্দা রোকেয়া বেগম জানান, ২০-২৫টি হাঁস দিয়ে পালন শুরু করেন। সকালে হাঁসগুলো পাশের পুকুরে চলে যায়। সারা দিন পুকুরের শামুক-ঝিনুক খায়। পরিবারের ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণ ছাড়াও হাঁস বিক্রি করে আয় করছেন তিনি। অথচ একসময় স্বামী–সন্তান নিয়ে কষ্টে কাটত তাঁর দিন। হাঁস পালন করে তাঁদের কষ্ট অনেকটা ঘুচেছে।

পৌরসভার নায়নপুর মহল্লার বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, খেতখামারের কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি। সন্তানদের পড়ালেখা করানো আর সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল তাঁর। পরে একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ির পাশের নন্দকুঁজা নদীতে ১০০ হাঁসের বাচ্চা দিয়ে লালন–পালন শুরু করেন। এখন খামারে ৫০০টি হাঁস রয়েছে। প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩২০টি ডিম মিলছে। এ বছর ডিমের দাম বেশি হওয়ায় লাভ বেড়েছে। সচ্ছলতা এসেছে পরিবারে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, সাধারণত এক দিনের বাচ্চা থেকেই এসব হাঁস পালন শুরু করে থাকেন খামারিরা। ছয় মাস পর এসব হাঁস ডিম দিতে শুরু করে। প্রতিটি হাঁস বছরে ২০০ থেকে ৩০০টি ডিম দেয়। উন্মুক্ত জলাশয়ে বাড়তি খাবার কম লাগে। তা ছাড়া রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমও মেলে বেশি। খরচ বাদে একজন খামারি প্রতি মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা লাভ করে থাকেন। ফলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ের এসব মানুষ কম পুঁজি বিনিয়োগ করে লাভবান হচ্ছেন। ফলে বেকারত্ব ঘুচছে। মিলছে আমিষের চাহিদাও।

গোলাম মোস্তফা জানান, হাঁস পালনে খামারিদের সরকারিভাবে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।