হাইকোর্টের নথি জালিয়াতি করে জামিন মামলায় বগুড়ায় ৩০ জন কারাগারে

আদালত
প্রতীকী ছবি

বগুড়ায় হাইকোর্টের নথি জালিয়াতি করে ‘ভুয়া আগাম জামিন’ আদেশ তৈরির মামলায় যুবলীগের এক নেতাসহ ৩০ আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক বেগম আসমা মাহমুদ এ আদেশ দেন। এর আগে এই মামলার ১৬ আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেছিলেন।

আসামিদের মধ্যে আছেন বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর ও সদর উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম। অন্যরা হলেন আমিনুলের সমর্থক আবদুল আলিম, আনোয়ার মণ্ডল, মোহাম্মদ বাদল, সেলিম, কিবরিয়া, রাশেদুল, সাদ্দাম, মাহমুদ, রতন, সেলিম রেজা, রুহুল আমিন, জাহিদুর রহমান, নুর আলম মণ্ডল, বিপুল ও সুমন প্রামাণিক।

এর আগে গত বুধবার একই আদালতে ১৪ আসামি আত্মসমর্পণ করলে তাঁদেরও কারাগারে পাঠানো হয়। আসামিরা হলেন লিটন প্রামাণিক, মোহাম্মদ মানিক, মোহাম্মদ জাকির, মোহাম্মদ তানভির, মোহাম্মদ আবদুল গনি, রাসেল মণ্ডল, আসাদুজ্জামান মনা, খোকন, শিপন, আল আমিন, দীপ্ত, মিরাজ, হেলাল ও রাব্বী। তাঁরাও আমিনুলের সমর্থক ও পরিবহন পেশার সঙ্গে জড়িত।

আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুল মান্নাফ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সম্প্রতি বগুড়া মোটরমালিক গ্রুপের কর্তৃত্ব নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মারপিট ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা এক মামলায় হাইকোর্টের নথি জালিয়াতি করে ‘ভুয়া আগাম জামিন’ আদেশ তৈরির অভিযোগ ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের কর্তৃত্ব নিয়ে গত ৯ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে পুলিশের একজন সদস্য ছুরিকাহত হন। এ ঘটনায় সদর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে করা মামলাসহ চারটি মামলা হয়। পুলিশের একটিসহ তিন মামলায় আসামি করা হয় বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আলম ওরফে মোহনকে। তিনি বর্তমানে দুটি মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিনে আছেন।

বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম
সংগৃহীত

অন্যদিকে মঞ্জুরুল আলমের ছোট ভাই মশিউল আলম বাদী হয়ে করা আরেকটি মামলার আসামি পৌর কাউন্সিলর ও মোটর মালিক গ্রুপের সর্বশেষ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম। তিনি বগুড়া সদর উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি। আমিনুলসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে করা এই মামলায় মঞ্জুরুল আলমের মালিকানাধীন একটি পেট্রলপাম্পে হামলা, গাড়ি ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও মারধরের অভিযোগ আনা হয়। আদালত সূত্রে জানা যায়, এ মামলায় জালিয়াতির মাধ্যমে আমিনুল ইসলামসহ ৩০ আসামির ‘ভুয়া আগাম জামিন’–এর হাইকোর্টের একটি আদেশের নথি তৈরি করা হয়।

‘ভুয়া আগাম জামিন’–এর আদেশের বিষয়টি নজরে এলে হাইকোর্টের বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ ৩০ আসামিকে এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রেপ্তারের আদেশ দেন। ভুয়া আদেশ তৈরি করায় তাঁদের বিরুদ্ধে (৩০ জন) কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা রুলে জানতে চাওয়া হয়।

ভুয়া আগাম জামিনের নথিতে কোন তারিখের মামলা, তা উল্লেখ নেই। হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ৩০ আসামি ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পেয়েছেন বলে ভুয়া আদেশে উল্লেখ করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী ৩০ জনের জামিন সঠিক কি না, তা যাচাইয়ের জন্য ওই আদেশটি আদালতের নজরে আনলে জালিয়াতির বিষয়টি ফাঁস হয়।

তথ্য যাচাইয়ের সময় ধরা পড়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি এ ধরনের কোনো আদেশ দেননি ওই বেঞ্চ। এই বেঞ্চে আগাম জামিন আবেদনের শুনানিও হয়নি। ভুয়া আগাম জামিন আদেশে রাষ্ট্রপক্ষে তিনজন আইন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়। যাঁদের দুজন ২০১৯ সালে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ত্যাগ করেন। আরেকজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল। যাচাইয়ের পর আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ৩০ আসামিকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেন।