হাতে ঈদ উপহার, চোখে পানি

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় রাজশাহীর আলোর পাঠশালা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করা হয়। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী নগরের রানিনগর শহীদ মিনার এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সন্ধ্যা খাতুনের সঙ্গে তার মা নীলা বেগমও এসেছিলেন। মেয়ের পক্ষে তিনিই হাতে নেন ঈদ উপহারসামগ্রীর প্যাকেট। এ সময় তাঁর চোখ দুটি পানিতে ছলছল করে ওঠে। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে পরিচালিত আলোর পাঠশালা, রাজশাহীর মাঠে আজ শুক্রবার শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনাকালীন ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেশ কয়েকজন অভিভাবকও এসেছিলেন।

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও সামিট গ্রুপের সহযোগিতায় এই উপহারসামগ্রী দেওয়া হয়। উপহারসামগ্রী হিসেবে পোলাওয়ের চাল, সাধারণ চাল, চিনি, সেমাই ও সোয়াবিন তেলের একটি করে প্যাকেট শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ১৪০ জন শিক্ষার্থী এই উপহার পায়।

নীলা বেগমের বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার চরখিদিরপুরে। তাঁর স্বামী শহীদ ঘোষ চর থেকে দুধ কিনে রাজশাহী শহরে এসে বিক্রি করেন। করোনাকালে তাঁর সেই ব্যবসায়ে ভাটা পড়েছে। চার মেয়েসহ ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে শহীদ ঘোষ পড়েছেন বিপাকে। আলোর পাঠশালা থেকে তাঁর মেয়ে ঈদ উপহারসামগ্রী পাবে, তাই মেয়ের সঙ্গে স্ত্রীকেও পাঠিয়েছেন।

উপহার পেয়ে চোখে পানি কেন জানতে চাইলে নীলা বেগম বলেন, প্রায় না খেয়ে দিন যাচ্ছে। ঈদের উপহার ঈদ পর্যন্ত তো আর থাকবে না। তার আগেই খেয়ে ফেলতে হবে। এ ছাড়া তাঁদের কোনো উপায় নেই।

পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি একমাত্র ভাই। এই করোনাকালে কেউ পদ্মায় বেড়াতে আসে না। ভাইয়ের নৌকাও চলে না। আমাদের খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। এবার ঈদের চিনি-সেমাই কেনার মতো আমাদের সামর্থ্য নেই। এই উপহারসামগ্রী দেখলে মা খুব খুশি হবেন।
মোবাশ্বেরা খাতুন, সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী

সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোবাশ্বেরা খাতুনের পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার একমাত্র ভাই। তিনি পদ্মা নদীতে যাঁরা ঘুরতে আসেন, তাঁদের নৌকায় নিয়ে বেড়ান। তা থেকে যা ভাড়া পান, তাই দিয়ে সংসার চলে। মোবাশ্বেরা জানায়, এই করোনাকালে কেউ পদ্মায় বেড়াতে আসে না। ভাইয়ের নৌকাও চলে না। তাদের খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। এবার ঈদের চিনি-সেমাই কেনার মতো তাদের সামর্থ্য নেই। এই উপহারসামগ্রী দেখলে মা খুব খুশি হবেন।

বিদ্যালয়ে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে রাজশাহী শহরে মিস্ত্রির কাজ করে নূর মোহাম্মদ। সে আলোর পাঠশালার অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। একই রকম কষ্টের কথা শোনায় সে। বাবা মাঠে কাজ করতেন। এখন তাঁর কাজ নেই। লকডাউনের কারণে তাঁর কাজ বন্ধ। মা-বাবাকে নিয়ে চার সদস্যের পরিবার নিয়ে নূর মোহাম্মদদের এখন খুব দুর্দিন। সে জানায়, পাঠশালা থেকে এই উপহারসামগ্রীতেই তাদের এবার ঈদ করতে হবে।

বেলা ১১টায় রাজশাহী নগরের রানিনগর শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থিত আলোর পাঠশালার মাঠে এই ঈদ উপহারসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আরমান আলী, প্রথম আলোর রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ, আলোর পাঠশালা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাসুদ রানা, পাঠশালার প্রধান শিক্ষক রেজিনা খাতুন, সহকারী প্রধান শিক্ষক রিপন মাহমুদসহ অন্যান্য শিক্ষক, প্রথম আলো রাজশাহীর বন্ধুসভার সভাপতি বেলাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জাবেদ হাসান, প্রথম আলো রাজশাহী বন্ধুসভার বন্ধু ইশরাত সুলতানা, ফরহাদ হোসেন, সুলতান শেখ, স্থানীয় অভিভাবক গাজী শেখ প্রমুখ।

কাউন্সিলর আরমান আলী প্রথম আলোর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, করোনাকালে দুস্থ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঈদ উপহারসামগ্রী তুলে দিয়ে তাঁরা শিক্ষাদানের পাশাপাশি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর যে দৃষ্টান্ত দেখাচ্ছেন, তা অন্যদের অনুসরণ করা উচিত।