হাবিপ্রবিতে উপাচার্যের ‘সাড়া’ না পেয়ে অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ

বিভিন্ন দাবিতে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবনের ফটকে ছাত্রলীগের অবস্থান কর্মসূচি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়
ছবি: প্রথম আলো

ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে বৈরী আচরণ, ক্লাস–পরীক্ষা চালু করা, শিক্ষক–কর্মচারী নিয়োগসহ বিভিন্ন দাবিতে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। আন্দোলনকারীরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে তাঁরা উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু উপাচার্যের ‘সাড়া’ না পেয়ে তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন।

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ছাত্রলীগের এই কর্মসূচি শুরু হয়। রাত ৮টা পর্যন্ত তাদের কর্মসূচি চলছিল। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা।

অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা থেমে থেমে উপাচার্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। ছাত্রলীগের পাশাপাশি চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে উপাচার্যের বাসভবনে অবস্থান নিয়েছেন মাস্টাররোলে বিভিন্ন পদে কর্মরত ৭২ জন কর্মচারী।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা বলছেন, করোনার বন্ধের শুরু থেকে বিভিন্ন দাবিতে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা জানান। কখনো লিখিতভাবে, মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে তাঁরা যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু উপাচার্য তাঁদের কথায় কোনো কর্ণপাত করেননি। সর্বশেষ মঙ্গলবার সকালে একাধিকবার ফোন দিয়েও সাড়া না পেয়ে ভিসির বাসভবনে এসে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতা–কর্মী।

২০১০ সালের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছাত্রলীগের অনুমোদিত কমিটি নেই। তবে সংগঠনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের শেখ রাসেল হলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোরশেদুল আলম। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস আসার আগে থেকেই উপাচার্য তাঁর বাসভবন থেকে বের হননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় কাজ তিনি বাসাতে বসেই করছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের কোনো অভিযোগ শুনতে চান না। বিভিন্ন জাতীয় দিবসের কোনো কর্মসূচিতেও অংশ নেন না।

মোরশেদুল আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সেমিস্টার ফি, যানবাহন–সংকট, ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি সময় দেন না। এমনকি ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেননি তিনি। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে অনলাইনে উদ্বোধনের দাওয়াতও তিনি গ্রহণ করেননি। জামায়াতপন্থী শিক্ষককে দিয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ও ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তোলেন।

এদিকে ছাত্রলীগের অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বিকেল ৫টায় উপাচার্যের বাসভবনে উপস্থিত হন দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাগফুরুল হাসান আব্বাসী, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাফফর হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ফজলুল হক, কোষাধ্যক্ষ বিধান চন্দ্র হালদার, প্রক্টর খালেদ হোসেন, ছাত্র উপদেষ্টা ইমরান পারভেজ প্রমুখ। তাঁরা উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তবে তাঁরা উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ না করা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচিতে অনড় থাকেন। সর্বশেষ রাত সাড়ে ৮টার দিকে আলোচনার জন্য বাসভবনের ভেতরে যান ছাত্রলীগের প্রতিনিধিরা।

ছাত্রলীগ বলছে, ২০১৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য হিসেবে এই ক্যাম্পাসে নিয়োগ পান অধ্যাপক আবুল কাশেম। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এই সময়ে তিনি বিভিন্ন বিভাগে ৪৩ জন শিক্ষক ও ২১ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেন। সর্বশেষ ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষক–কর্মকর্তা নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বছর শেষ হলেও নিয়োগ দিতে বিলম্ব করেন তিনি।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ফজলুল হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছে। তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছি।’ নিয়োগপ্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, যেহেতু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা আছে, সুতরাং খুব কম সময়ের মধ্যে নিয়োগপ্রক্রিয়ার কাজ শুরু করা হবে। তিনি বলেন, শুধু নিয়োগ নয়, শিক্ষকদের পদোন্নতি, কর্মকর্তা–কর্মচারীদের আপগ্রেডেশনসহ সব বিষয়ে সমস্যার সমাধানে কমিটি করা হয়েছে। অচিরেই সব সমস্যার সমাধান করা হবে।