‘হামার মতন গরিব মানুষক তোমহারা দেখা পাওছেন’

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে সোমবার সকালে দিনাজপুরে কম্বল বিতরণ করা হয়। সদর উপজেলার রাজবাটি এলাকার হীরাবাগান মাঠে
প্রথম আলো

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে আজ সোমবার সকালে দিনাজপুরের রাজবাটি হীরাবাগান মাঠে শীতার্ত মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। বন্ধুসভার সদস্যরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কম্বল তুলে দেন শীতার্তদের মধ্যে।

সকাল সাড়ে আটটা থেকে হীরাবাগান মাঠে গাবুড়া, গুঞ্জাবাড়ি, কাঠাপাড়া, গোলাপবাগ এলাকা থেকে আসতে থাকেন শীতার্তরা। আগে থেকেই বন্ধুসভার সদস্যরা বাড়িতে গিয়ে তাদের একটি করে স্লিপ দিয়ে আসেন। সেই স্লিপ হাতে নিয়ে মাঠে এসে বসেন দুই শতাধিক মানুষ। প্রথমে প্রত্যেকেই একটি করে মাস্ক পরিয়ে দেওয়া হয়।

শহরের গাবুড়া এলাকা থেকে কম্বল নিতে এসেছিলেন গুঠুলি বালা (৭০)। বন্ধুসভার বন্ধুরা নীল রঙের কম্বল তুলে দেন তাঁর হাতে। ‘নাল (লাল) কম্বলটা ভালো নাগিছিলো (লেগেছিল)’ বলতেই বন্ধুসভার সদস্যরা তাঁর কম্বলটা বদলে দেন।

গুঠুলি বালা বলেন, ‘হামার মতন গরিব মানুষক তোমহারা দেখা পাওছেন। আইজকাইল কাহো খোঁজ রাখোছে নাই। কম্বলখান পায়া মোর খুব উপকার হইল।’

২০ বছর আগে স্বামী মারা গেছে জীবনদাসীর (৮৫)। চার মেয়ের বিয়ে হয়েছে। একমাত্র ছেলে মনোহর রায় জন্ম থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন জীবনদাসী। লাঠিতে ভর করে কম্বল নিতে এসেছিলেন হীরাবাগান মাঠে। কম্বল হাতে নিয়ে বলতে শুরু করলেন, ‘এইবার কাহো কম্বল দেয় নাই, তোমরাহ কেবল মোক দিলেন।’

এর আগে সকাল সাতটায় দিনাজপুরের ৫০ জন পত্রিকা হকারদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়। কম্বল পেয়ে হকার আনিস আহমেদ বলেন, ‘প্রথম আলো বরাবরই আমাদের খোঁজ রাখে। কম্বল সবচেয়ে বেশি দরকার আমাদেরই। সেই ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে পত্রিকা নিয়ে বের হই। করোনাকালে পত্রিকা বিক্রি কিছুটা কমেছে। প্রিয় পত্রিকা আমাদের খোঁজ রেখেছে দেখে ভালো লাগছে।’

হীরাবাগান মাঠে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর বন্ধুসভার উপদেষ্টা ও ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিশেষজ্ঞ শিলাদিত্য শীল, প্রথম আলোর দিনাজপুর প্রতিনিধি রাজিউল ইসলাম, স্থানীয়দের মধ্যে সুশীল অধিকারী, বিপুল সরকার, বন্ধুসভার সভাপতি আর্নিকা নাওয়ার, সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হাসানসহ সদস্য সিফাত, আপেল, হারুন, সুব্রত, মেহেগ, শুভ, হীরা, সাঈদ, রায়হান, কামরুজ্জামান, তারেক, রাফিউল, ইমরান প্রমুখ।