হারিয়ে যাওয়ার ৫৫ বছর পর বাড়ি ফিরলেন তিনি

গোলাম মোস্তফা
সংগৃহীত

১০ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে ময়মনসিংহের গফরগাঁও রেলস্টেশনে গিয়ে হারিয়ে যান গোলাম মোস্তফা। ঘটনাচক্রে তিনি গফরগাঁও থেকে ট্রেনে চড়ে চলে যান পাবনা জেলার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে। সেখানে একটি চায়ের দোকানের পাশে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। স্থানীয় রিকশার গ্যারেজের মালিক সিরাজ উদ্দিন তাঁকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আশ্রয় দেন। এরপর থেকে শিশু মোস্তফার ভরণপোষণ করেন তিনি।

একপর্যায়ে মোস্তফা রিকশার গ্যারেজে কাজ নেন। প্রাপ্তবয়স্ক হলে এলাকার সোহাগী বেগম নামের এক মেয়েকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। এভাবেই কেটে গেল মাস, বছর ও কয়েক যুগ। অবশেষে ৫৫ বছর পর গত শুক্রবার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাংগালিয়া ইউনিয়নের দগদগা গ্রামে নিজ বাড়িতে ফিরেছেন গোলাম মোস্তফা। তাঁকে দেখতে ভিড় করেছেন এলাকার অনেকে।

১৯৬৫ সালের দিকে হারিয়ে গিয়েছিলেন গোলাম মোস্তফা। ছোটবেলায় হারিয়ে যাওয়া সহপাঠীকে দেখতে এসেছেন দগদগা গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি জালাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘শৈশবে গোলাম মোস্তফাকে নিয়ে আমরা একসঙ্গে মাঠে খেলাধুলা করেছি। তার হারিয়ে যাওয়ার খবরে অনেক কষ্ট পেয়েছি। এত দিন পর সে ফিরে আসার খবর পেয়ে তাকে দেখতে ছুটে এসেছি। মুক্তিযুদ্ধের পাঁচ-ছয় বছর আগে সে হারিয়ে গিয়েছিল।’

গোলাম মোস্তফার এখন বয়স ৬৫ বছর। তাঁর বাবার নাম আজিম উদ্দিন। পাকুন্দিয়া উপজেলার জাংগালিয়া ইউনিয়নের দগদগা গ্রামে তাঁর জন্ম। দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছে তাঁর। বড় ছেলে সজীব হোসেন একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম করেন ব্যবসা। সুমনা নামের তাঁর এক মেয়েও আছে। স্ত্রীসহ পরিবার নিয়ে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার রহমান কলোনিতে বসবাস করে আসছিলেন তিনি।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, চার বছর আগে মোস্তফা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখনো তিনি অসুস্থ। তিন মাস আগে স্ত্রী সোহাগীকে ডেকে তাঁর হারিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। সেই সময় তাঁর বাড়ির ঠিকানা মেয়েকে কাগজে লিখতে বলেন। মেয়েও সেই ঠিকানা কাগজে টুকে রাখেন। এরপর বড় ছেলে সজীব হোসেন গুগল ম্যাপে সার্চ দিয়ে তাঁর বাবার জন্মস্থান পাকুন্দিয়ার দগদগা গ্রামের সন্ধান পান। গুগল থেকে দগদগা গ্রামের এক ব্যবসায়ীর মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে কথা বলেন এবং তাঁর বাবার ছবি ফেসবুকে পাঠান। ওই ব্যবসায়ী বিষয়টি এলাকার লোকজনের কাছে জিজ্ঞাসা করেন এবং একপর্যায়ে হারিয়ে যাওয়া গোলাম মোস্তফার ছবি দেখালে তাঁর ছোট ভাই আবদুল আওয়াল চিনতে পারেন।

এদিকে ২ অক্টোবর আবদুল আওয়াল হারিয়ে যাওয়া বড় ভাইয়ের ঈশ্বরদীর বাসায় গিয়ে নিজ বাড়িতে ফেরার আহ্বান জানান। শেষ পর্যন্ত স্ত্রী-সন্তানসহ বাড়িতে ফেরেন মোস্তফা। আবদুল আওয়াল বলেন, বড় ভাই হারিয়ে যাওয়ার পর অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। দীর্ঘ ৫৫ বছর পর ভাইকে ফিরে তাঁরা আনন্দিত।

মোস্তফার আশ্রয়দাতা সিরাজ উদ্দিনে মুঠোফোনে বলেন, ঈশ্বরদী রেলস্টেশন–সংলগ্ন এক চায়ের দোকানের পাশ থেকে অসুস্থ অবস্থায় মোস্তফাকে নিয়ে বাড়িতে আশ্রয় দেন। তাঁর চিকিৎসা করে সুস্থ করে নিজের রিকশা গ্যারেজে কাজ দেন। পরে তাঁকে বিয়ে দিয়ে জমি কিনে আলাদা বাড়ি করে দেন।

তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় গফরগাঁও রেলস্টেশনে ট্রেনে উঠার পর হারিয়ে যান বলে জানান গোলাম মোস্তফা। এত বছর পর নিজ বাড়িতে ফিরে সৃষ্টিকর্তার কাছে শোকরিয়া আদায় করেন তিনি।

এ বিষয়ে জাংগালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরকার শামীম আহমেদ বলেন, ‘হারিয়ে যাওয়া গোলাম মোস্তফা ৫৫ বছর পর নিজ বাড়িতে ফিরে আসার খবর শুনেছি। দীর্ঘদিন পর এলাকার ছেলে এলাকায় ফিরে আসায় দগদগা গ্রামের মানুষ খুবই আনন্দিত।’