হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ে উৎসবের প্রতীক বিজু ফুল

পাহাড়ের বৈসাবী উৎসবের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ বিজু ফুল। সেই ফুলের দেখা মিলল খাগড়াছড়ির পানছড়ি কানুনগো পাড়ায়
ছবি: প্রথম আলো

চৈত্র মাসে বিজু ফুল ফুটলেই পাহাড়ে বিজু উৎসবের আমেজ দেখা যায়। পাহাড়ে পাহাড়ে ক্ষণে ক্ষণে বিজু পেক্কো (বিজু পাখি) বিজু বিজু বলে ডেকে ওঠে তখন। হাদি আর পিনোন বুনতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন নারীরা। আর জুম বোনার প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যায় জুমিয়াদের। চোয়ানি-জোগড়া (পানীয়) আর পাজনের (পাচন) উপকরণ জোগাড় চলতে থাকে বাড়িতে বাড়িতে।

বিজু, বৈসু, সাংগ্রাই, বিহু (বৈসাবি)—সম্প্রদায়ভেদে উৎসবের নাম ভিন্ন ভিন্ন হলেও তার রূপ বা চেহারায় সেই ভিন্নতা নেই। বিজু ফুলের ক্ষেত্রেও তা-ই। চাকমারা যাকে ‘ভাত জোড়া’ বলে, ত্রিপুরাদের কাছে তা ‘কুমুই-বোবা’ আর মারমারা সেটাকে ডাকে ‘চাইগ্রাইটেং’ ফুল বলে। তবে পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালিরা এই ফুলকে ভিউফুল বলে।

দেখতে অনেকটা রঙ্গন ফুলের মতো এই পাহাড়ি ফুল। থোকায় থোকায় ফোটা এই ফুলের রং সাদা। মাঝে ঈষৎ গোলাপি আভা নিয়ে তার রূপ। যে কারোর পাহাড়ে কোথাও দেখা মিললেই এই ফুলে হাত বাড়াতে ইচ্ছা হয়। বিজু, বৈসু, সাংগ্রাই, বিহু উৎসব এই ফুল ছাড়া কল্পনাও করা যায় না। সব সম্প্রদায়ের এই উৎসব তিন দিনের। চাকমাদের কাছে এই তিন দিন ফুল বিজু, মূল বিজু আর গজ্জেপজ্জে বিজু নামে পরিচিত।

গঙ্গায় বা নদীতে বিজু ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে বিজু উৎসব শুরু হয়। ঘরেও বিজু ফুলের উপস্থিতি থাকে। বিজু ফুল ছাড়া ঘরে উৎসবের মেজাজই আসে না। চাকমাদের প্রচলিত বিশ্বাস, ফুল বিজুর দিন এই ফুলের ঘ্রাণ নিলে রোগবালাই থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে এই ফুলের তেমন আর একটা দেখা মেলে না। অনেক কিছুর মতো এটিও হারিয়ে যাচ্ছে পাহাড় থেকে।

৮ এপ্রিল খাগড়াছড়ির পানছড়ি সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে কানুনগোপাড়ায় একটি ঝোপে দেখা মিলল বিজু ফুলের। ঘন ঝোপের মধ্যে সবুজ পাতার ফাঁকে থোকা থোকা ফুটে ছিল এই ফুল। বিদ্যালয়ে যাওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী পাতা দিয়ে আড়াল করে রাখছিল ফুলগুলো, ফুল বিজুতে নদীতে ভাসাবে বলে।

গাছের প্রতিটি শাখার অগ্রভাগে থোকায় থোকায় বিজু ফুল ফোটে। ঊর্ধ্বমুখী মঞ্জরিগুলো হালকা সাদা আর গোলাপি। ফুল আকারে ছোট নলাকৃতির। প্রতিটি ফুলের পাপড়ি থাকে চারটি। ফুটন্ত ফুল অনেক দিন স্থায়ী হয়।