হাসপাতালের ভেতরে কর্মচারীর ঘর, ‘খুঁটির জোর’ থাকায় ভাঙতে পারে না কেউ

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের ভেতরে টিনশেডের এই ঘর তুলেছেন এক কর্মচারী। মঙ্গলবার দুপুরে তোলা ছবি
প্রথম আলো

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের ভেতরে জমি দখল করে ঘর নির্মাণ করেছেন চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিনবার নোটিশ দিয়েও ওই স্থাপনা সরাতে পারেনি।

ওই কর্মচারীর নাম মো. কিরণ আলী। তিনি হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি। তাঁর বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীচর ইউনিয়নের বারুয়ামারি গ্রামে। ২০০১ সালে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে বাবুর্চি পদে যোগ দেন কিরণ। কয়েক মাস আগে সরকারি ওই জমিতে অবৈধভাবে থাকার ঘর নির্মাণ করেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাবুর্চি কিরণ আলী প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে সরকারি জমিতে ঘরবাড়ি নির্মাণ করা ঠিক হয়নি, এটা সত্য। তবে তিনি যে ঘরে থাকতেন, সেটা ভেঙে যাচ্ছে। বিষয়টি দেখে বছর দু-এক আগে হাসপাতালের তৎকালীন এক সহকারী পরিচালক (এডি) এখানে ঘর তুলতে বলেছিলেন। তখন তিনি ঘর নির্মাণ করেননি। সম্প্রতি ঘর নির্মাণ করেছেন। এ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তাঁকে নোটিশ দিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তিনি সেই নোটিশের জবাব দিয়েছেন।

টিনশেড ঘরটির এই কক্ষকে রাজনৈতিক কার্যালয় বানিয়ে নিয়েছেন কর্মচারীর ছেলে।
প্রথম আলো

গত মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতাল কমপ্লেক্সের পশ্চিম পাশে নতুন টিনশেড ঘর। ঘরের ফটকে কিরণ আলীর নামে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ছাপানো পোস্টার সাঁটা। ঘরের মেঝে পাকা। ঘরে কক্ষ আছে চারটি। সেখানে তাঁর সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্যরাও থাকেন। টিনশেড ঘরটির কাছেই রোগীদের ওয়ার্ড। বাড়ির ভেতরে ছোট্ট একটি রাজনৈতিক কার্যালয়ও খোলা হয়েছে। কিরণ আলীর ছেলে জামালপুর শহর ছাত্রলীগের সদস্য শফিকুল ইসলাম এ কার্যালয়ে বসেন। কার্যালয়ের ভেতরে ‘বাংলাদেশ স্কুলছাত্র কার্যনির্বাহী সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটি’ লেখা একটি ব্যানার টাঙানো। তাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কয়েকজন নেতার ছবি রয়েছে।

কর্তৃপক্ষ তিনবার নোটিশ করার পরও অবৈধ স্থাপনাটি সরাননি কিরণ। কাজটা বেআইনি হলেও ‘খুঁটির জোর’ দেখিয়ে ওই কর্মচারী কাউকেই মানছেন না।
জাহাঙ্গীর সেলিম, সদস্য, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটি

জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, সরকারি জমিতে কর্মচারীর ঘর নির্মাণের বিষয়টি গত রোববার তিনি রোগীকল্যাণ সভায় তোলেন। কর্তৃপক্ষ তিনবার নোটিশ করার পরও অবৈধ স্থাপনাটি সরাননি কিরণ। কাজটা বেআইনি হলেও ‘খুঁটির জোর’ দেখিয়ে ওই কর্মচারী কাউকেই মানছেন না।

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, সরকারি জমিতে ঘরবাড়ি তুলতে ওই কর্মচারী কোনো ধরনের অনুমতি নেননি। সবার সঙ্গে আলোচনা করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থাপনাটি ভেঙে দেওয়া হবে।