হাসপাতালে শয্যাসংকট, ভারতফেরত রোগীদের সরানো হচ্ছে অন্যত্র

হাসপাতালে শয্যা না পাওয়ায় মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন অনেকে। শুক্রবার যশোর জেনারেল হাসপাতালে।
ছবি : এহসান-উদ-দৌলা

করোনা উপসর্গের রোগীদের রাখার জন্য যশোরে জেনারেল হাসপাতালে শয্যাসংকট প্রকট হয়েছে। হাসপাতালের ইয়েলো জোনে এখন শয্যার চেয়ে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি রয়েছেন। উপসর্গের রোগীদের ভর্তি নিচ্ছে না জেলার কোনো বেসরকারি হাসপাতাল। আবার কোভিড ‘পজিটিভ’ রোগীদেরও মাঝেমধ্যে জেনারেল হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে মেঝেতে থাকতে হচ্ছে। পরিস্থিতি সামলাতে ভারতফেরত করোনা রোগীদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে।

জানতে চাইলে যশোরের জেলা প্রশাসক ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিষয়টা আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। কোভিড রোগীদের রাখার জন্য আজ শনিবার থেকে বেসরকারি জনতা হাসপাতালটি নেওয়া হয়েছে। সেখানে ৪০টি শয্যা রয়েছে। ভারতফেরত করোনা পজিটিভ ব্যক্তিদের এই হাসপাতালে রাখা হবে। এতে জেনারেল হাসপাতালের করোনা রেড জোনে রোগীর চাপ অন্তত অর্ধেক কমবে।’

স্বাস্থ্য বিভাগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, যশোরে এখন ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাশির উপসর্গের রোগী রয়েছেন। কিন্তু শয্যাসংকটসহ নানা কারণে বেশির ভাগই হাসপাতালমুখী হচ্ছেন না। এরপরও যশোর জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ সামলানো যাচ্ছে না। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত জ্বর, সর্দি-কাশি নিয়ে এখানে ৩৭ জন ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে (ইয়েলো জোন) শয্যা ১৯টি। এর বিপরীতে এখন ৪৫ জন ভর্তি আছেন। আর করোনা ইউনিটে (রেড জোন) ৮০ শয্যার বিপরীতে ৭৫ জন ভর্তি রয়েছেন। দুদিন আগে রেড জোনে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ৯১। অর্থাৎ, করোনা রোগী সবাইকে তখন শয্যা দেওয়া সম্ভব হয়নি। হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটে তিনটি শয্যা; একটিও খালি নেই। হাসপাতালের করোনা ইউনিটে যে ৭৫ জন ভর্তি আছেন, তাঁদের মধ্যে ৩৪ জন ভারতফেরত। করোনার ডেলটা (ভারতীয়) ধরন নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। আবার করোনা পজিটিভ হলেও তাঁদের অনেকেরই উপসর্গ নেই। এমন রোগীরা করোনা ওয়ার্ডে থাকতে আপত্তি জানান। এ অবস্থায় ভারতফেরত করোনা পজিটিভ সবাইকে বেসরকারি জনতা হাসপাতালে স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে তাঁদের মধ্যে কারও অবস্থা গুরুতর হলে সঙ্গে সঙ্গে জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হবে।

জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আখতারুজামান বলেন, হাসপাতালের করোনা ইউনিট ব্যবস্থাপনায় নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সাজেদা ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় হাসপাতালে ২৫টি শয্যার আলাদা ওয়ার্ডের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেখানে গুরুতর রোগীদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হবে।

আমরাও মনে করি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা আরও বাড়ানো দরকার। কিন্তু হাসপাতালের নমুনা সংগ্রহকেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা করানোর বিষয়ে মানুষের আগ্রহ কম। পরীক্ষার জন্য যত মানুষ আসবে, আমরা তত পরীক্ষা করতে পারব।
শেখ আবু শাহীন, সিভিল সার্জন, যশোর

এদিকে যশোরে নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। সীমান্তবর্তী এই জেলার ৯টি হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১০০টির মতো অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যক্তির করোনা শনাক্ত হচ্ছে। অ্যান্টিজেন পরীক্ষার বাইরে খুলনা এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিসিআর ল্যাবে যশোরের বাসিন্দাদের নমুনা পরীক্ষা হয়ে থাকে। তবে সেই সংখ্যা প্রতিদিন ৩৫০টির বেশি নয়। সব মিলিয়ে দিনে ৪০০-৫০০টি নমুনা পরীক্ষাকে প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার যশোরের ৯টি হাসপাতালে ১০৩টি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনিবার অ্যান্টিজেন পরীক্ষা না হলেও পিসিআর ল্যাবে যশোরের ৫৫৮ জনের পরীক্ষায় ২৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

নমুনা পরীক্ষার বাড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলেন, ‘আমরাও মনে করি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা আরও বাড়ানো দরকার। কিন্তু হাসপাতালের নমুনা সংগ্রহকেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষা করানোর বিষয়ে মানুষের আগ্রহ কম। পরীক্ষার জন্য যত মানুষ আসবে, আমরা তত পরীক্ষা করতে পারব। আমাদের দিক থেকে কোনো সংকট নেই। তবে আগের চেয়ে পরীক্ষা কিছুটা বেড়েছে। আরও কীভাবে পরীক্ষা বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।’