‘হিল হইরা বেক জমির ধান শ্যাষ, কিবায় যে কিতা অইবে’

১৫ মিনিটের শিলাবৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসে সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুরে উপজেলার মেধা হাওরে
ছবি: প্রথম আলো

‘ধারদেনা কইরা ২৭ কিয়ার বোরো জমিত ধান রুয়াইছিলাম (রোপণ)। রবিবার থাইক্যা ভাগালু (শ্রমিক) দিয়ে ধান কাটাবাইবার কথা আছিন। হিল (শিলা) হইরা আমার বেক জমির ধান শ্যাষ অইয়া গ্যাছে। অহন হারা বছর কিবায় যে কিতা অইবে, তা উফুরওয়ালাই জানেন।’

কথাগুলো বলছিলেন সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের মেধা হাওরপারের খলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কৃষক মো. নজর ইসলাম (৬০)। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত উপজেলায় শিলাবৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাস হয়েছে। এতে নজরুল ইসলামের মতো অনেক কৃষকের বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের প্রাথমিক হিসাবে, ১ হাজার ৪৫৫ হেক্টর বোরো জমির পাকা ধান ও ১০৫ হেক্টর পাটখেত আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া ঝোড়ো বাতাসের কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ৭–১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল। এতে লোকজনকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ৩১ হাজার ৮৫০ হেক্টর বোরো জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়। ধরমপাশা সদর, সেলবরষ ও পাইকুরাটি—এই তিন ইউনিয়নে ২৭০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ করা হয়। গত সোমবার থেকে উপজেলা প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে হাওরে বোরো ধান কাটার উদ্বোধন করে। এ পর্যন্ত ৪৫৩ হেক্টর বোরো জমির ধান কাটা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শিলাবৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাস বইতে শুরু করে। এতে ধরমপাশা, সেলবরষ, পাইকুরাটি, মধ্যনগর ও সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের বিভিন্ন হাওরে ১ হাজার ৪৫৫ হেক্টর বোরো জমির পাকা ধান ও ১০৫ হেক্টর পাটখেত আক্রান্ত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, শিলাবৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসে ১ হাজার ৪৫৫ হেক্টর বোরো জমি ও ১০৫ হেক্টর পাটখেত আক্রান্ত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তিনি জানতে পেরেছেন। ক্ষতির সঠিক পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যত দ্রুত সম্ভব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।

নেত্রকোনা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির ধরমপাশা অভিযোগকেন্দ্রের ইনচার্জ জয়েন উদ্দিন বলেন, শিলাবৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার কারণে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির নেত্রকোনা গ্রিড থেকে রাত তিনটার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা উপড়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে তার বিচ্ছিন্ন হয়। তাঁরা ভোর থেকেই মেরামতকাজ শুরু করেন। এ অবস্থায় উপজেলার কোথাও কোথাও ৭–১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল।

বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির ধরমপাশা উপজেলা শাখার সহসভাপতি খায়রুল বশর ঠাকুর খান বলেন, শিলাবৃষ্টিতে উপজেলা কৃষি বিভাগ যে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে বাস্তবে তার চেয়ে আরও অনেক বেশি হয়েছে। ক্ষতির সঠিক পরিমাণ ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনতাসির হাসান আজ শুক্রবার বিকেল চারটার দিকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়া কৃষকদের তালিকা ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে মুঠোফোনে জানিয়েছেন।