হুইপের ইউনিয়নে এক সপ্তাহ আগে টিকাদান

সরকারি নির্দেশনার তোয়াক্কা না করে জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর বাড়ি পটিয়া উপজেলার শোভনদন্ডী ইউনিয়নে গণহারে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। এই টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) মো. রবিউল হোসেন। এ ব্যাপারে বিভাগীয় পরিচালক দপ্তর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে।

রবিউল হোসেন দাবি করেন, হুইপ সামশুল হক চৌধুরী তাঁকে এলাকার লোকজনকে টিকা দিতে বলেছেন। তবে হুইপ বলেছেন, তিনি এর সঙ্গে জড়িত নন। তিনি বললে তো কার্যক্রমের উদ্বোধনই করতেন।

সরকারি চাকরিতে ঢোকার আগে রবিউল পটিয়া কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ২০১২ সালে তিনি স্বাস্থ্য বিভাগে সরকারি চাকরিতে ঢোকেন। রবিউল দাবি করেন হুইপ সামশুল হক চৌধুরীর মৌখিক নির্দেশনায় তিনি শুক্রবার থেকে দুদিন ধরে টিকা কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

আজ শনিবার পর্যন্ত দুদিনে প্রায় দুই হাজার মানুষকে টিকা দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। অথচ সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান শুরু হবে। এর আগে শুধু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কার্যালয়ে টিকা দেওয়া হবে।

শোভনদন্ডী ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদানের বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা (ইউএইচএফপি), সিভিল সার্জন কিংবা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কেউ আগে থেকে জানতেন না।

জানতে চাইলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারও নির্দেশনা ছাড়া রবিউল এভাবে টিকা দিতে পারে না। সরকারিভাবে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান শুরু হবে ৭ আগস্ট। এর আগে নিবন্ধনবিহীন লোকদের টিকা প্রদান ঠিক হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দুই কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’

তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট অজয় দাশকে। অপর দুই সদস্য হলেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার মো. নুরুল হায়দার ও ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ আসিফ খান।

আমার কোনো বিষয় নেই। ওটা ডাক্তারদের বিষয়।
হুইপ সামশুল হক

জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার শোভনদন্ডী আরফা করিম উচ্চবিদ্যালয়ে এবং আজ শনিবার শোভনদন্ডী স্কুল অ্যান্ড কলেজে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টিকা কার্যক্রম চালানো হয়। বিষয়টি জানার পর আজ পটিয়ার ইউএইচএফপি সব্যসাচী নাথ ঘটনা পরিদর্শনে যান।

জানতে চাইলে সব্যসাচী নাথ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই টিকাদান সম্পর্কে আমি বা ঊর্ধ্বতন কেউ জানতেন না। সিভিল সার্জনের নির্দেশে আমি এলাকায় গিয়ে দেখেছি টিকা দেওয়া হচ্ছে। রবিউল হোসেন টিকা দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে তাঁকে কাল কারণ দর্শানো নোটিশ দেব।’ ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদানের জন্য ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ চলছে বলে তিনি জানান।

দুই দিনে দুই হাজার মানুষকে টিকা দেওয়া হয়। পটিয়ার শোভনদন্ডী স্কুল অ্যান্ড কলেজ
ছবি: সংগৃহীত

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে রবিউল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শোভনদন্ডী এলাকার বাসিন্দা। এলাকার লোকজন আমাকে ধরেছেন নিবন্ধনের পরও তাঁরা টিকা পাচ্ছেন না। আমি হুইপ স্যারকে (সামশুল হক চৌধুরী) বলতে বলেছি। পরে হুইপ আমাকে বলেছেন, যদি পারি তাহলে ব্যবস্থা করতে। তাই আমি সেখানে গিয়ে দুদিনে দুই হাজার টিকা দিয়েছি। সবাই নিবন্ধিত। তাঁদের এসএমএস না আসাতে টিকা দিতে পারছিলেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটা মানবিক সেবামূলক উদ্দেশ্যে করেছি। কোনো আর্থিক বা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে নয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কোনো বিষয় নেই। ওটা ডাক্তারদের বিষয়। তবে ৭ তারিখের আগে দেওয়া তো উচিত নয়। আমি যদি দিতেই বলতাম, তাহলে তো কার্যক্রমের উদ্বোধন করতাম।’